ন্যায় বিচারের দাবিতে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চৌদ্দ হাজারী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান তালুকদার বাদশা(৭০) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গতকাল বাগেরহাট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হত্যা মামলায় প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে তদন্ত কালক্ষেপন করছে বলে অভিযোগ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় চৌদ্দ হাজারী গ্রামের হাসিনা বেগম, সাইদুর রহমান, কালাম তালুকদার, টুটুল তালুদার, রিয়াজ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান তালুকদার বাদশা তার লিখিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৯ সালের ১৭ জুন চৌদ্দ হাজারী গ্রামের কাওছার তালুকদারের ছেলে খালিদ তালুকদারকে (৬) হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে মাত্র পাঁচ মাস পরে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর কাওছার তালুকদারের সৎ ভাই মান্নান তালুকদারের ছেলে রিফাত তালুকদারকে (৫) হত্যা করা হয়। খালিদ হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামী করে এবং রিফাত হত্যায় আমিসহ ১৬ জনকে আসামীকে করে চিতলমারী থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন কাওছার ও মান্নান তালুকদার। ওই মামলার এজাহার নামীয় সকল আসামী বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বাগেরহাটের তদন্তে রিফাত হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন হয়। পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আদালতে এজাহার নামীয় আসামীদের অব্যাহতি এবং কাউছার তালুকদারের ভাতিজা আমিন তালুকদার, সাকির তালুকদার, ইকবাল তালুকদার ও নিকট আত্মীয় হাফিজুর রহমান ছোটকে দোষী সাব্বস্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে “প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে শিশুপুত্রকে হত্যা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরে মামলার বাদী মান্নান তালুকদার পিবিআইর চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজি প্রদান করেন। আদালত সিআইডির উপর মামলার তদন্তভার প্রদান করেন। তিনি জানান, সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম রিফাত হত্যা মামলায় স্বীকারোকী প্রদানকারী সাকির তালুকদার ও হাফিজুর রহমান ছোটকে খালিদ হত্যা মামলায়ও শোন এ্যারেস্ট দেখায়। পরে এসআই নিকুঞ্জ বাবু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হয়ে রিফাত হত্যা মামলার আরেক আসামী আমিন আলুকদারকে শোন এ্যারেস্ট দেখায়। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে এই দুইজন কর্মকর্তাকে তদন্তভার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে দায়িত্ব¡ পান এসআই দেবব্রত হরি। এসআই দেবব্রত হরিকেও তদন্তভার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে এসআই শাহজাহান শেখ মামলার তদন্তভার পান। দেড় মাস পরে শাহজাহানকে সরিয়ে তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই শাহানারা আফরোজকে। সবশেষ চলতি বছরের আগস্ট মাসে খলিলুর রহমান নামের এক এসআইকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। তিনি আরো জানান, এই দুটি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডির পাঁচ কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও এখনও পর্যন্ত মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় আমরা চরম হতাশার মধ্যে রয়েছি।আসলেকি ন্যায় বিচার পাব। এখন এধরণের প্রশ্ন সকল আসামী, আসামীদের আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি বর্তমান বাগেরহাট সিআইডি কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালে মাহমুদ মামলার মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ বাদী কাওছার তালুকদার ও মান্নান তালুকদারের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। একাধিকবার বাদীর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়াও করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালে মাহমুদ ও এস আই খলিলুর রহমান। বাদীদের ধর্ম আত্মীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেই সূত্র ধরে এই মামলার তদন্ত কালক্ষেপন করা এবং প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই দুটি হত্যা মামলার পরে আমাদের ঘরবাড়ি ভাংচুর, গরু-ছাগল, ঘেরের মাছসহ সব ধরণের মূল্যবান সম্পাদ লুটে নেয় কাওছার তালুকদার, তার ভাই মান্নান তালুকদার ও তাদের লোকজন। এখনও আমাদের বসত বাড়িতে যেতে পারি না। অধিকাংশ পরিবারের লোকজন কাওছার তালুকদার ও তার সহযোগীদের ভয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার সঠিক তদন্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিলের আবেদনের দাবী জানান এই মুক্তযোদ্ধা। তবে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালে মাহমুদ ও এস আই খলিলুর রহমান অভিযোগটিঁ সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন।