ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছত্রছায়ায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার সব কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট) আসনের এমপি শিবলী সাদিক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘আসাদুল, জাহাঙ্গীর ও আরও একজন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের (আসাদুল ও জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদকের বিস্তারের একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে তাদের দল থেকে বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি আড়াই থেকে তিন মাস আগে যুবলীগকে জানাই। স্থানীয় নেতাদের ও সেন্ট্রাল নেতাদের একাধিকবার জানাই। স্থানীয় পর্যায় থেকেও জেলা কমিটিকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিঠির কোনও রিপ্লাই আসেনি। এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, দেশবাসীসহ সেটা আমারও প্রশ্ন, আমিও জানতে চাই।’
এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এরা একাধিক মামলার আসামি। জাহাঙ্গীর, আসাদুল, নান্নু এরা একই গ্রুপে চলাচল করে। জমিজমা কেনা সংক্রান্ত, বিশেষ করে ওসমানপুর কেন্দ্রিক বিষয়ে এদের অনেক দৌরাত্ম। আমি এই সব কাজ পছন্দ করি না। সেকারণে আমার কোনও কার্যক্রমে অংশ নিতে দেই না। এ কারণে এরা আমাকে নিয়ে অশালীন কথাবার্তাও লিখেছে। আমি একাধিকবার তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়ে কোনও জবাব পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় এই যে আওয়ামী লীগ পরিবারের ওপর কাদা লেগে গেলো, এর জবাব কে দেবে? যারা দায়িত্বে আছেন, তদেরই দিতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ বলেন, ‘গত ৭ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ডিওসহ অভিযুক্ত যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে চিঠির উত্তর পাওয়া যায়নি। এই আহ্বায়ক কমিটি ২০১৭ সালে গঠিত হয়েছিল। সাধারণত তিন মাসের অধিক সময় হলে কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিন বছর সেটি একইভাবে চলছে। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই কমিটি হয়েছিল।’
ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নিরুপ সাহা জানান, জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে জেলা যুবলীগের কাছে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। বুধবার (২ সেপ্টম্বর) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকেও (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা।
এই ঘটনায় শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে আসাদুল হক ও জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হিলি ও ঘোড়াঘাট থেকে গ্রেফতারের পর তাদের দুই জনকেই রংপুর র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।