খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে তিনি খাদ্য সঙ্কটের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নওগাঁ-১ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য এই মন্ত্রী বলেন, দেশের কোনো জমি যাতে অনাবাদি না থাকে তার জন্য তার মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমের পরই আসছে বোরো মৌসুম। আমরা পদক্ষেপ নেব যাতে সব চাষযোগ্য জমিতে বোরো চাষ হয়। আমরা ইতোমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলেছি আসন্ন বোরো মৌসুমে যথাযথ সেচের ব্যবস্থা করতে।’
মন্ত্রী বলেন, আগামী ফসলের মৌসুমে কৃষকরা যাতে সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য তাদের জমি চাষ করতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সংসদ সদস্যকে তাদের নির্বাচনী এলাকায় সতর্ক থাকতে বলেছেন।
তিনি বলেন, যেকোনো সঙ্কট এড়াতে সরকার কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের উর্বর জমিতে অসংখ্য ফসলের চাষ হয়। আমরা পাই আমন, আউশ ও বোরো। যদিও এ বছর বৃষ্টিপাত কম বা না হওয়ায় খরার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, পরে জুলাই-আগস্টের বৃষ্টিপাত আমাদের ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। কিছু ফসল আছে, যেগুলো রোপণ করতে দেরি হয়েছে। তাই সেগুলোর ঘাটতি হতে পারে। সব মিলিয়ে যে কোনো ধরনের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আমরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি।’
দেশে বর্তমানে কী পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে সে সম্পর্কে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন যে প্রত্যেককে খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ১৭ লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে। আরো পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টন চাল পাইপলাইনে রয়েছে। এছাড়া শিগগিরই মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ আমাদের কাছে মোট ২০ লাখ টন চাল মজুদ থাকবে।’ তিনি বলেন, দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। সাধারণত সবসময় ১০ থেকে ১২ লাখ টন চালের মজুদ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে যে খাদ্য মজুদ রয়েছে তা খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস), পরীক্ষামূলক ত্রাণ (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ (কাবিখা) বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়। এই মজুদ ফুরিয়ে গেলে আমরা খাদ্য আমদানি করব।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের এর থেকেও বেশি মজুদ আছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করলেও এখন মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে ছাড়পত্র পেয়েছি। আমাদের কাছে কম্বোডিয়া থেকে চাল আমদানির অফার রয়েছে। আমরা চাল আমদানির জন্য আরও উৎস খুঁজছি। খাদ্য সংকট দেখা দিলে আমরা এই দেশগুলো থেকে খাদ্য আমদানি করে যেকোনো সংকট মোকাবিলা করতে পারব।’
মন্ত্রী বলেন, আমদানিকারকদের সরকারি কোষাগারে মাত্র ৫ শতাংশ ট্যাক্স পরিশোধ করে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই সুযোগ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
তিনি বলেন, যদি দেখি যে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন তাহলে আমরা এই এসআরও (সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ) বাড়াব।
বর্তমান বিদ্যুতের সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে অবশ্যই কৃষি কাজ ব্যাহত হবে। বিশেষ করে সেচের সময় এটি বেশি প্রয়োজন। এতে ধান উৎপাদন কম হবে। তবে এ বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ না। এটি কৃষি মন্ত্রণালয় দেখবে। আশা করি এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সেচ মৌসমে কার্যকরী ব্যবস্থা নিবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রনালয় ও সংশ্লিস্ট সংস্থা সমন্বয় করে মনিটরিং করা হবে।