পুরান ঢাকার ঠাটারি বাজারে সবজি ও মাছ দোকানিদের ওপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক নতুন করে ইজারা বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নতুন করে জারি করা এ বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রুল শুনানি পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের জারি করা বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে। এসময় পর্যন্ত ১৯৯ দোকানির ওপর কোনো হয়রানি করা যাবে না। এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে চূড়ান্ত বরাদ্দ থাকা অবস্থায় নতুন করে ঠাটারি বাজারে মাছ ও সবজি দোকান নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে কাপ্তানবাজার ও ঠাটারি বাজার মৎস্য, কাঁচামাল সবজি বিক্রেতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের আক্তার হোসেনসহ ১৯৯ দোকানি গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসআরএম লুৎফর রহমান আকন্দ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন মিজবাহুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এ বিষয়ে আইনজীবী লুৎফর রহমান আকন্দ বলেন, কাপ্তানবাজারের ঠাটারি বাজারের মাছ ও সবজি বিক্রেতা ১৯৯ জন ব্যক্তি সিটি করপোরেশনের একটি বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ সিটি করপোরেশনের বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেছেন। আবেদনের নথিপত্রে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে ঢাকা সিটির মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় ঠাটারি বাজারে একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে ১৯৯ ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ১৯৯ ব্যক্তিকে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র দেন। দোকানপ্রতি মাসে ৮০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এভাবেই চলে আসছিল। এরপর সিটি করপোরেশন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবন ভেঙে দেয়। ভবনটি ভাঙার পর কাউন্সিলরের লোকজন সেখানে টিন দিয়ে সীমানা প্রাচীর দিতে চেয়েছিলেন। সীমানা প্রাচীর না করেই ব্যবসা করার সুযোগ দিতে কাউন্সিলরকে অনুরোধ করেন দোকানিরা। তখন স্থানীয় কাউন্সিলর ব্যবসা করতে হলে রাজস্ব দিতে হবে জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে তার চাচাতো ভাই ইয়াছিরের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
ইয়াসির দোকানিদের বলেন, ব্যবসা করতে হলে দিনে দোকানপ্রতি ২০০ টাকা করে দিতে হবে। নিরুপায় হয়ে ১৯৯ দোকানি কাউন্সিলরকে দিনে ৩৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এভাবে তারা ছয় মাস কাউন্সিলরের লোকজনকে দৈনিক ভিত্তিতে টাকা দেন। পরের ছয় মাস সব দোকানি মিলে দিনে দেন ২৮ হাজার টাকা করে। এরপর গত ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত পরের এক বছর দিনে ৩১ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছেন, যা নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নতুন করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এরপর মো. কামরুজ্জামানকে কার্যাদেশ দিয়ে ১৬ অক্টোবর একটি কার্যাদেশ জারি করে। এ কার্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ১৯৯ জন। রিটে স্থানীয় সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী, বিভাগীয় কমিশনারসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশ দেন।