বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ভাইরাসটির প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। এক মাসের মাথায় এই সংক্রমণকে বৈশ্বিক সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। এর প্রায় দেড় মাসের মাথায় এ সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করা হলো। বৈশ্বিক মহামারীর তিনটি সাধারণ নির্ণায়ক হলো এমন ভাইরাসের সংক্রমণ যা অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণ হয়; মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এ ভাইরাসে তিনজনের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৫২ হাজার মানুষ বিদেশ থেকে এসেছেন। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন বা সংক্রমিত হয়েছেন সন্দেহে দেশের ২০ জেলায় ১৭৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে এসেছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনের মূল উদ্দেশ্য দ্রুত রোগ শনাক্ত করা, সংক্রমণ রোধ করা। জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর হোম কোয়ারেন্টাইনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেলায় জেলায় সিভিল সার্জনদের কাছে বিশেষ নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানে গত ২৮ ফেব্র“য়ারি থেকে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী সিভিল সার্জনসহ স্থানীয় প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। তবে হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে রাজধানীর সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি লোকজনের একধরনের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। আইইডিসিআর যেভাবে ও যে পদ্ধতিতে হোম কোয়ারেন্টাইন করার কথা বলছে, সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না মাঠপর্যায়ে। এ ধরনের সমন্বয়হীনতা উদ্বেগজনক।
সাম্প্রতিক অতীতে ঘটা নানা ধরনের জৈব হুমকির প্রেক্ষাপটে প্রতিটি দেশই এখন নতুন আবির্ভূত যেকোনো রোগ-ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রাথমিক পর্যায়েই জোর দিচ্ছে। তারা নাগরিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদ্বুদ্ধকরণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা, আইসোলেশনের জন্য আলাদা হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা কর্মী গড়ে তোলা, অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা তৈরি ও গবেষণা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় নিশ্চিতে সরকারি বরাদ্দ বাড়াচ্ছে এবং মহামারী মোকাবিলায় সার্বিকভাবে সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলছে। বাংলাদেশকেও সেদিকেই যেতে হবে। প্রচলিত আছে, নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণেই আমাদের অধিক মনোযোগ দিতে হবে।