খেলতে নেমেছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শততম ম্যাচ। দারুণ উপলক্ষ, তৈরিও ছিল ম । তবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যাট হাতে মাঠে নামা হয়নি তার। আর তাই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল তার জন্য, তার দলের জন্য। যা হয়তো ভাবেননি কখনো, ঘটে গেল একটা রঙিণ স্বপ্নের নির্মম সমাপ্তি। যার কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই, নেই সেখান থেকেই ফিরে আসার সুযোগ। ফিরতে হবে শুরু থেকে, শুরু থেকেই ফের করতে হবে লড়াই।
বলছিলাম সাকিব আল হাসানের কথা। উচ্ছ্বসিত এই নামটা যেন আজ বড্ড ভারাক্রান্ত, সদা উজ্জ্বল নামটা যেন বিবর্ণ। যেই নাম শুনলে চব্বিশ ঘন্টা আগেও আনমনে হেসে উঠতো অনেকে, এখন সেই নামেই হাহাকার ঝরে, আক্ষেপ আর হতাশায় ভারী হয় কণ্ঠ৷ একটাই আফসোস সবার মুখে, ইশ! যদি সাকিব থাকতেন মাঠে! হতাশায় ভুগছেন স্বয়ং তিনিও। শত ঝড়-ঝঞ্ঝায় ও অপ্রতিরোধ্য, অপরাজেয় সাকিব আজ যেন একটু মেনে নিয়েছেন পরাজয়৷ হয়তো নিজেই বুঝতে পারছেন না কি করেছেন তিনি, হয়তো ভাবছেন এমন ভুল তার দ্বারা কিভাবে হয়! মাঠের বাইরে যাইহোক, মাঠের ভেতর সাকিব ছিলেন বরাবরই উদ্যমী। কিন্তু গত রোববার যা হলো, সাকিব হয়তো তা ভুলেও ভাবেননি।
এই বিপিএলের সাকিব তো সবার চাওয়া, এমন সাকিবকে দেখতে পারাটাও ছিল বড় পাওয়া। ভয়-ঢরহীন, বিধ্বংসী, বড্ড সাহসী। মনে হতে পারে খুবই ক্ষুধার্ত কিংবা বড্ড খ্যাপাটে। হয়তো জমে থাকা অভিমানের এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ ছিল তা, হতে পারে সমালোচনার সীমারেখা ভেঙে জানান দেয়া, শুধুই একজন বুড়িয়ে যাওয়া সাকিবের প্রয়োজনীয়তা। হতে পারে আরও অনেক কিছুই।
তবে সব কিছুই মিশে গেল একটা ভুলে। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার, তাই হয়তো লোকে বলে। কিন্তু সেটাই তো পারলেন না সাকিব। ফলেই তো দেখা মিললো বড্ড অচেনা এক সাকিবের। এমন করে ভেঙে পড়তে এর আগে কখনো দেখিনি তাকে। পুরো পৃথিবীও যখন নুয়ে পড়ে, এক সাকিব তখন বরাবরই লড়ে। এমনটা হবারও কারণ আছে, সাকিব তো ছিলেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছন্দে। সেরা ছাত্র ব্যর্থ হলে মন তো খারাপই হবে। এবারের বিপিএলে সাকিব ছিলেন, সাকিব আছেন আরো একবার টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার হবার দৌঁড়ে। এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ রান, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা, নূন্যতম ১০০ রান করা ক্রিকেটারদের মাঝে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট সাকিবের। ১১ ইনিংসে ৪১.৬৭ গড়ে ৩৭৫ রান করেন সাকিব। স্ট্রাইকরেট ১৭৪.৪২, ছক্কা মেরেছেন ২২টি। ছিল ৬.৫৯ ইকোনমিতে ১০টি উইকেটও। সাকিবের সামনে সম্ভাবনা ছিল প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে চার শতাধিক রানের কীর্তি গড়ার। সুযোগ ছিলদলকে শিরোপা জিতিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হবার। হয়তো এখনো টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারেন, তবে চ্যাম্পিয়ন হবার তৃপ্তি কী আর সাকিব পাবেন!