রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা গুলো আবাসিক এলাকার পাশেই ও ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি দূষিত করছে পরিবেশ। এছাড়া এসব ইটভাটায় ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে গাছ। বায়ু দূষণের কারণে হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও এর প্রভাব পড়ছে ফসলে। তবে পরিবেশ দূষণরোধে এ উপজেলায় নেই কোন অভিযান। প্রশাসন যেন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। জানা গেছে, মারাত্মক বায়ু দূষণের বড় উৎস ইটভাটা। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, বাযু দূষনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারপাশ। কৃষিজমির মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরিতে। ইট পোড়াতে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে গাছ। ভাটার কালো ধোঁয়ায় মাটির উর্বরতা, গাছ গাছালি নষ্ট হয়ে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। দূষিত পরিবেশে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আক্রান্ত হচ্ছেন হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ব্যাধিতে। পরিবেশ অধিদফতর, রাজশাহীর তালিকা অনুযায়ী গোদাগাড়ীতে ১৫ টি ইটভাটা রয়েছে। বর্তমানে ১৫ টি ইটভাটা অবৈধ। ১৫ টি ইটভাটার কোনটারি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র নাই বলে পরিবেশ অধিদফতর, রাজশাহী সুত্রে জানা যায। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটায় ইট তৈরিতে পোড়ানো হচ্ছে গাছ। এছাড়া কয়লার কারণে চিমনি দিয়ে অনবরত কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ উপজেলার বেশীর ভাগ ইটভাটা নিয়ম না মেনেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে। যেগুলোর পাশেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , আবাসিক স্থাপনা, জনসাধারনের চলাচলের পাকারাস্তা, রাজশাহী-চাপাই মহাসড়ক ও তিন ফসলী মাঠ। কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযরে দুই পাশে রয়েছে মুন ইটভাটা ও এম এস বি ইটভাটা, বারোমাইল বি আর এফ ইটভাটার অল্প দূর পাশেই সেখেড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও বিদিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। যদিও স্কুল-কলেজের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাটা তৈরির নিয়ম নেই। তবুও সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে দেদারসে গড়ে ওঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা। কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযরে প্রধান শিক্ষক মোঃ হোসেন আলী বলেন,স্কুল সংলগ্ন ইটভাটা গড়ে উঠায় স্কুলের কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে। সব সময় ইট বহন কারি টলি ও ট্রাক চলাচল করায় জীবনের ঝুকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাটা থেকে ক্লাশ রুমে, অফিস রুমে ও সমস্ত স্কুল চত্বরে ধুলা-বালি, ইটের গুড়া ও কালো ধোয়া এসে ভর্তি হয়ে যায়। এতে করে হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে কমলমতি শিক্ষার্থীরা। কাদিপুর এলাকার হাসান বলে, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় গাছের পাতা মরে যায়, ফসলি জমির ক্ষতি হয়। আমের মুকুলের ক্ষতি হচ্ছে। এলাকায় ইটভাটার জন্য দূষণের কারণে ফসল ভালো হয় না। আরেক বাসিন্দা কারমি বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর ধূলাবালিতে এলাকায় হাঁটা চলা করা যায় না। অনেক মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিতে ভুগছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকাবসীর অভিযোগ রয়েছে ইটভাটার কলো ধোয়া আর ধূলাবালিতে পরিবেশ দুষন, রোগে আক্রান্ত ও ফসলের ক্ষতি হলেও প্রশাসন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে না। ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন মালিকপক্ষ এমন তথ্য এলাকাবাসীর। দূষণরোধে ইটভাটায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এখনো অভিযান চলমান। জেলা ও উপজেলা প্রসাশনের সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।