সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

প্রাকৃতিকভাবে মৌমাছির চাকে ভাগ্য ফিরেছে নওগাঁর দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ॥ দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

নওগাঁ প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের পীরপালি ও ফেটগ্রাম নামের দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা মৌমাছির চাক। বর্তমানে এই দুটিগ্রাম মৌমাছির চাকের গ্রাম হিসেবে বেশি পরিচিত। এক একটি বাড়িতে শতাধিক মৌ মাছির চাক। আর সেই চাক থেকে নিজ চোখে দেখে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই শতাধিক দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন ওই বাড়িগুলোতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বাড়িতে ঘরের ভিতরের মৌমাছিরা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করেছে অসংখ্য মৌ চাক। হাজার হাজার মৌমাছি উড়ছে আর বাড়ির লোকজনও একসাথে চলাফেরা করছে। এযেন মৌমাছি আর মানুষের এক অনন্য মিতালী। এক আর্শ্চয্যজনক দৃশ্যপট। এলাকার এক বাড়িতে ৩০থেকে ৫০টি মৌমাছির আবাসস্থল দেখতেও দৃষ্টিনন্দন। পীরপালি এবং ফেটগ্রামের অধিকাংশ বাড়ির ঘরের দেওয়ালে, বারান্দায়, ছাদের কার্নিশে, ঘরের ভিতরের কক্ষগুলোসহ গাছের ডালসহ বাড়ির আনাচে-কানাচে মৌমাছির দল আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। অথচ কোনোদিন মৌমাছির কামড় খেতে হয়নি কাউকে। নিজে চোখে দেখে মৌমাছির চাক থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে আশপাশেরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন শত শত দর্শনার্থীরা। একটি মৌচাক থেকে ৩থেকে ৫কেজির অধিক মধু সংগ্রহ করা যায়। এতে করে এলাকার পরিবারগুলোর ভাগ্য ফিরেছে যেন বিধাতার হাতের ইশারায়। এই গ্রামের মানুষদের ভাগ্য ফেরার চিত্র এখন সবার মুখে মুখে। সরিষা চাষের মৌসুমে এই মৌমাছিগুলো চলে আসে আর পছন্দের বাড়িগুলোতে তৈরি করে মৌচাক। একটি মৌচাক থেকে একাধিকবার মধু সংগ্রহ করা যায়। আবার মৌসুম শেষ হয়ে গেলে অধিকাংশ মৌমাছি অন্যত্র চলে যায় আর কিছু মৌমাছি চাক করে থেকে যায় বছরজুড়ে। প্রতি মৌসুমে মৌচাক মধু নামের একটি স্থানীয় কোম্পানী গ্রামের এই সব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে দেশ ও বিদেশেও রপ্তানি করে আসছে। মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের মধুপ্রেমীদের ভ্রমণে নিয়ে এসেও প্রত্যক্ষভাবে চাক থেকে প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা খাঁটি মধু সংগ্রহ ও খেতে উৎসাহ প্রদান করে আছে। প্রতি কেজি ৫০০-৬০০টাকা করে বিক্রি করা হয়। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা পেশায় চুক্তিকৃত কয়েকজন ব্যক্তি মধু সংগ্রহের টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন। মৌচাক মধু কোম্পানীর প্রোপ্রাইটর আব্দুর রহিম বলেন আমাদের দেশেও যে খাঁটি পণ্য উৎপাদিত হয় সেই বিষয়টিকে তুলে ধরতে আমি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধুপ্রেমীদের একটি প্যাকেজের মাধ্যমে এই মধুর গ্রামে নিয়ে এসেছি যেন তারা নিজ চোখে দেখেন যে আমার কোম্পানি প্রাকৃতিক ভাবে মধু আহরোন করে তা সঠিক ভাবে প্রক্রিয়া করে বাজারজাত করে আসছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ,কে,এম মনজুরে মাওলা বলেন চলতি সরিষা মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এই মধু সংগ্রহ করতে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মৌ বাক্স প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বাহিরে থেকে মৌয়ালদের নওগাঁয় এসে মধু সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যার কারণে এই মধু সংগ্রহ করতে নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে অনেক বেকারদের। সৃষ্টিকর্তার এমন মহিমায় একদিকে যেমন এই মৌচাকগুলো ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এবং অপরদিকে সংগ্রহকৃত মধু বিক্রি করে ফিরেছে গ্রামবাসীদের ভাগ্য। তাই এই ঐতিহ্যকে যুগের পর যুগ ধরে রাখতে চান গ্রামবাসীরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com