রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোষ্টেল নির্মিত দেশের প্রথম শহিদ মিনার যা স্মৃতি স্তম্ভ নামে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। উন্মুক্ত জায়গায় এই স্তম্ভটি একসময় যেমন অবহেলিত ছিল তেমন অপরিষ্কার থাকতো বছর জুড়ে।এখন তা সারাবছরই ঝকঝকে পরিষ্কার। শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে নয় সব সময় পরিষ্কার ও যতেœ রাখেন রাজশাহী কলেজের নৈশ্য প্রহরী মাসুদ রানা। আট বছর আগে কলেজে হোষ্টেল পরিচর্যার দ্বায়িত্ব পান,তখন থেকেই এই স্মৃতি স্তম্ভটির মায়ায় পড়েন মাসুদ। সকাল বিকাল ধুলাবালি পরিষ্কার করা,ও ফুল গাছ রোপন করে বেড়ি তৈরি করে সুন্দর্য বর্ধন করা দৈনন্দিন কাজে পরিনত হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, “এটা দেশের প্রথম শহিদ মিনার, এটার যতœ করতে পারাই আমার ভাগ্য বলে আমি মনে করি, আমি শহিদ দের কথা স্বরন করি আর তাদের ভালোবেসেই আমি কাজ করি,এতে কখনো আমি পরিশ্রম করলাম ভাবিনা,সবটুকুই ভালোবাসা। সারাদেশ থেকে অনেক মানুষ আসে তারা শ্রদ্ধা জানায় ছবি তোলে এ মিনারে,পরিষ্কার তো থাকতেই হবে,আমার শয়ন কক্ষ পরিষ্কার থাকলে এই শহিদ মিনার ও পরিষ্কার থাকবে আল্লাহ আমাকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখবে”। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে-এমন একটি খবর রাজশাহীতে আসে সন্ধ্যায়। রাজশাহীর মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের টেলিফোনে খবরটি আসার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি চালানোর খবরে সোচ্চার হয়ে ওঠেন রাজশাহীর ছাত্র-জনতা। ওই রাতেই রাজশাহী কলেজের এ ব্লকের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম আরিফ টিপুর কক্ষে সভা হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় শহীদদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। কিন্তুৃ তখনকার দিনে শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না কারও। তারপরও রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হলো নির্মাণকাজ। পাশেই ছিল হোস্টেল নির্মাণের জন্য ইট-কাঠ। সেই ইট-কাঠের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে রাত ১২টার মধ্যে নির্মিত হলো দেশের প্রথম শহীদ মিনার। মাটিতে কালি দিয়ে দিয়ে লিখে দেওয়া হলো ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। এভাবেই রচিত হলো আমাদের দেশের মহান ভাষা শহীদদের সম্মানে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস।হোষ্টেল সুপার সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক বলেন, “মুসলিম হোষ্টেলের এই স্মৃতি স্তম্ভটি দেশের একটি ইতিহাসের সাক্ষী, হোষ্টেল কর্তৃপক্ষ ও বসবাসরত শিক্ষার্থীরা সবাই শ্রদ্ধা করে, এই স্থানটি প্রতিদিনই স্বযতেœ পরিষ্কার পরি”ছন্ন করা হয়”। রাজশাহী কলেজের যেখানটায় শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল একই স্থানে ২০০৯ সালে নির্মাণ করা হয় একটি শ্রদ্ধা স্মারক। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক বলেন, ‘দেশের প্রথম শহীদ মিনারের স্মৃতি স্মারক নির্মাণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ দেশের প্রথম শহীদ মিনারের স্মৃতি এতদিন ধরে রেখেছে, চারপাশে স্থায়ী বেড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা চলমান আছে।