নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারের ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে’ (এলডিডিপি) প্রাণিসম্পদ খাত তথা পোল্ট্রি, ডেইরিসহ নানা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে পশুপাখি পালন। অনেকেই বসতবাড়িতে পশুপাখি পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। আবার কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে বড় বড় খামার গড়ে তুলেছেন। এতে নতুর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। প্রকল্পের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় দেশের পার্বত্য জেলা ব্যতীত ৬১ জেলার ৪৬৫ উপজেলা এবং সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। এতে অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রকল্পটির আওতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাদেবপুরের ৮৩৪ জন খামারির মধ্যে ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪০ টাকার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এ সহায়তা পেয়েছেন। বিনামূল্যে ৪৩৩ জন খামারির মধ্যে কৃমিনাশক বিতরণ ও তাদের নিয়ে ১১টি উৎপাদনকারী দল গঠন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর চত্বরে উন্নত জাতের ঘাস চাষ, প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী-২০২১ ও ২০২২ বাস্তবায়নসহ প্রকল্পের নানা কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা। এদিকে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ‘স্মার্ট লাইভস্টক, স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের আয়োজনে দিনব্যাপি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩২টি স্টল দেয়া হয়। প্রাণিসম্পদ সংক্রান্ত নানা আধুনিক প্রযুক্তিসহ খামারিরা স্টলগুলোতে দেশি ও উন্নত প্রজাতির বিদেশি পশুপাখি প্রদর্শণ করেন। যা দেখে পশুপাখি পালনে আরও উদ্বুদ্ধ হন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রদর্শনী শেষে অংশগ্রহণকারী খামারিদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও আবু হাসান। এরপর সেখানে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, গাভী-ষাঁড়, ছাগল-ভেড়া এবং হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী দ্বারা খামারিদের দক্ষতা উন্নয়ন; দুগ্ধ বিপণনের জন্য বাজার সংযোগ স্থাপন করা। এছাড়াও উৎপাদিত পণ্য বহুমুখীকরণ, মূল্য সংযোজন, স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাণিজাত আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উৎপাদনকারী, পরিবহনকারী, ব্যবসায়ী, কারিগর, ভোক্তা সব স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে এ প্রকল্প। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী-২০২৩ এর বহুল প্রচারের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর মিলনায়তনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মালেক জানান, মাংশ, দুধ ও ডিম উৎপাদনে উদ্বৃত্ত মহাদেবপুর উপজেলা। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এই উপজেলায় মাংশের চাহিদা ছিল ১২ দশমিক ৮২ হাজার মেট্রিক টন, আর উৎপাদন হয়েছে ১৪ দশমিক ৯২ হাজার টন। ২৭ হাজার মেট্রিক টন দুধের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩১ হাজার টন। ডিমের চাহিদা ছিল তিন কোটি চার লাখ টি; উৎপাদন হয়েছে ছয় কোটি ৪১ লাখ। এখানে উৎপাদিত মাংশ, দুধ ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।