সম্প্রতি সুইডেন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অব ডেমোক্রেসির (ভি-ডেম) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে উদার গণতান্ত্রিক সূচক ও নির্বাচন ভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশগ্রহণ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে এই প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচে নামায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ১০ দফা দাবির আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশে এখন কোনও গণতন্ত্র নেই। বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ দখলদার সরকার বাকশাল আদলে স্বৈরাচারী এক নায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করেছে। সভায় ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন আরও বেগবান করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে সহযোগী সংগঠনগুলো সেমিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় ঢাকাসহ সকল মহানগর গুলিতে প্রতি থানায় যে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে ঢাকা মহানগর উত্তরে তুরাগ থানা এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কামরঙ্গিরচর থানার পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে এই ধরনের হামলা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
তেজগাঁও থানার কর্মসূচি হতে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবকে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান চেয়ারম্যান এবং ভাটারা থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় অবিলম্বে গ্রেফতারকৃদের মুক্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়।
সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক নির্দোষ ঘোষনা এবং তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে নির্দেশ প্রদানে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্প্রতি লন্ডন ভিত্তিক পত্রিকা ‘দি ইকোনোমিস্ট’ ‘ঢাকার দুর্নীতির গন্ধ শহরটির দূষিত বাতাসকেও হার মানিয়েছে’ মন্তব্য সম্বলিত প্রতিবদেন নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান আওয়ামী সরকারের নজীর বিহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার লক্ষে আগামীতে কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় তিস্তা নদীর ওপর ভারতের তিস্তা প্রকল্পে আরও দুটি খাল খননের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহারের সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানির বন্টনের কোনও চুক্তি স্বাক্ষর না করে আরও ২টি খাল খনন পরিকল্পনা বাংলাদেশেকে বঞ্ছিত করার উদ্যোগ। বর্তমান সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদনের কোনও কার্যকরী উদ্যোগ নিতে এই সরকার ব্যর্থ হচ্ছে এবং বাংলাদেশের জনগণ তাদের ন্যয্য পাওনা থেকে বি ত হচ্ছে। সভায় অবিলম্বে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সম্প্রতি পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। প্রকৃত পক্ষে সরকার জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এই ভয়ানক হীন সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করছে। অবৈধ সরকার এই জঘন্য ন্যক্কার জনক সংঘাত ও হত্যাকান্ড ঘটিয়ে বিরোধী দল বিএনপি’র ওপর দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। এই ঘটনায় এই অবৈধ সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন বিএনপি সমর্থককে গ্রেফতার করেছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। রেলমন্ত্রী সুজন পঞ্চগড়ে উক্ত উপদূত এলাকা সফরে গেলে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যবৃন্দ তাকে স্পষ্ট জানান যে আক্রমণকারীরা তার সঙ্গেই রয়েছে। সভা মনে করে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সরকারের হীন পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা এই সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে।
সভা মনে করে যে, এই সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটছে যা এই অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় অবৈধভাবে টিকে থাকার নীল নকশার অংশ। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল অতি দ্রুত পঞ্চগড় সফর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সঙ্গে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি ও পঞ্চগড়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার দাবি জানানো হয়।