নেত্রকোনার দুর্গাপুর সদর, চন্ডিগড় ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ফান্দা, লক্ষিপুর, মাকরাইল, মধুয়াকোনা ও ইন্দ্রপুর গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৬৯টি ঘর। নেত্রকোনা জেলাকে ভুমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনা করার লক্ষ্যে, শনিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ঘর গুলো পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুন খন্দকার। অত্র উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ৩৫ জন, ২য় পর্যায়ে ৪৫ জন, ৩য় পর্যায়ে ৬৪ জন ও ৪র্থ পর্যায়ে ২৫ জনসহ মোট ১৬৯ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে কোন ক শ্রেণির ভূমিহীন পরিবার পাওয়া গেলে তাদেরও দ্রুত পুনর্বাসনের লক্ষ্যে খাস জমি নির্বাচন করে পুনর্বাসন করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত যৌথসভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো ভূমিহীন ও গৃহহীন চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসিত করা হবে। ফান্দা আবাসনের ভূমিহীন হনুফা খাতুন(৪৯) খবরপত্র কে বলেন, আমার কুচতা বুদ্ধি কম অউনে আমার দামান রাজ্যের দিন (প্রায় ১৩ বছর) আগে আমারে হালাইয়্যা গেছইনগা। এরহর থেইক্যা মাইনষের বাড়িত ভিক্ষা হইরা কোনক মতে জীবনডা ধইরা রাখছি। মাইনসের ঘরের বাড়িন্দাত, ইস্কুল ঘরের বাড়িন্দাত রাইত কাডাইছি, অহন আর আমারে মশায় কামরায় না, শেখ হাসিনা আমারে বেল্ডিং ঘর দিছইন? অহন নমাজ হড়ি আর কোরআন হড়ি হেইলার লাগি দোয়া করতাছি। আল্লায় হেইলার বালা করবাইন। শারীরিক প্রতিবন্ধি নির্মল রবিদাস বলেন, বাঁচার তাগিদে শরীরে সমস্যা থাকার কারনেও নিরুপায় হয়ে অন্যের কাছে হাত না পেতে জুতা সেলাই পরে স্বর্নের দোকানের সহকারী হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। দু‘মুঠো ভাত আর মাথা গুজার ঠাই যেন তার নিত্য দিনের সঙ্গী। বর্ষা মৌসুমে খুবই কষ্টে কাটে তার সংসার। ছোট একটি মেয়ে আছে সংসারে। ফান্দা আবাসনে মুজিব বর্ষের ঘর পেয়ে ধন্যবাদ জানালেন শেখ হাসিনা কে। আগামী ঈদে শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি লিখবেন তিনি। পরিদর্শন কালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান, সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. আরিফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ আলী, আব্দুল জব্বার, সিরাজুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি নির্মলেন্দু সরকার বাবুল, সাংবাদিক তোবারক হোসেন খোকন, ওয়ালী হাসান, আরেফিন রাসেল, উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যবৃন্দ, ইউপি সদস্য মো. সবুজ মিয়া প্রমুখ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্গাপুর উপজেলায় সব মিলিয়ে ১৬৯টি ভুমিহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মান করা হয়েছে। সর্বশেষ ফান্দা এলাকার রংধনু প্রকল্পে ২৫টি ঘর নির্মান কাজ শেষ, এখনা পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলছে। আগামী মংগলবার সরকারি ভাবে তাদের দলিল করে দেয়া হবে। ইউএনও রাজীব-উল-আহসান যুগান্তর কে বলেন, সারাদেশে ভূমিহীনদের জন্য ২শতক জায়গা সহ পাকা ঘর নির্মান দিয়ে বিশ্বের বুকে এক নজির স্থাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অত্র উপজেলায় চতুর্থধাপে মোট ১৬৯ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পরবর্তিতে আরো পুনর্বাসিত করা হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুন খন্দকার যুগান্তর কে বলেন, আগামী ২১ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে সারা দেশের ন্যায় নেত্রকোনা জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষনা করবেন। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলা পরিদর্শন করা হয়েছে। দুর্গাপুর উপজেলায় যে কাজ হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। দুর্গাপুর উপজেলা ছাড়াও পুর্বধলা, কলমাকান্দা, আটপাড়া, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা সদর উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মদন উপজেলা ভূমিহীন ঘোষণা করা হয়েছে।