শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

শিমুল ফুলের সৌন্দর্য, মৌমাছির গুঞ্জন, পাখির কলকাকলির মুখর ধনবাড়ী

জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃতি সেজেছে এক রঙ্গিন সাজে। মৌমাছির গুঞ্জন আর পাখির কলকাকলিতে মুখর এলাকা। এ যেন কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। সব কিছুর মধ্যে ও প্রকৃতিকে যেন সাজিয়েছে শিমুলে ফুলের শোভায় এক নতুন রূপে। বাতাসে দোল খাচ্ছে শিমুল ফুলের রক্তিম আভায়। গাছের ডালে ফুটে থাকা শিমুল ফুলে মানুষের মনকে যেন রাঙিয়ে তুলেছে। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেয় শাহ আব্দুল করিমের সেই গানের লাইনটি ”বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে,সেই গো বসন্ত বাতাসে। শিমুল গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠছে। তাছাড়া বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না এই গাছে রয়েছে নানা উপকারিতা এবং অর্থনৈতিকভাবে ও বেশ গুরুত্ব বহন করছে। প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম বোমবাক্স সাইবা লিন। বীজ ও কা-ের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার হয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে শিমুল ফুল। পাশাপাশি বসন্তের সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতি যেন নিজ রূপে সেজে উঠেছে। রাস্তার দু’পাশে, পুকুরপাড়ে শিমুল গাছে ফুল বাতাশে দোলা খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। পথচারিসহ দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে শিমুল ফুল। তাছাড়া গাছে গাছে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিময় বাতাস জানান দিচ্ছে নতুন লগ্নের। ফাল্গুনের আগমনে পলাশ, শিমুল গাছে লেগেছে আগুনে খেলা। লাল ফুলের কারণে পুরো এলাকায় হয়ে উঠেছে রক্তিম আভা। ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে ঝিনাই নদীর রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়ে শিমুল ফুল ফোটার দৃশ্য। ২৪ থেকে ২৬ ফুট লম্বা মাঝারি আকারের দুটি গাছ। খুব বেশি শাখা-প্রশাখা নেই। পাতা ঝরে পুরো গাছের শাখে এখন শিমুল ফুলের কুঁড়ি। সেই কুঁড়ি ফুটে গাঢ় লাল রঙের আভা নিয়ে বেরুচ্ছে অপরূপ শিমুল ফুল। দু একটি ফুল পুরোপুরি ফুটেছে। তবে গাছের তলায় ঝরে পড়ার সেই চিরচেনা দৃশ্যে চোখ জুড়াতে অপেক্ষা করতে হবে আরও সপ্তাহখানেক। আলাদা কোনো গন্ধ নেই, তবুও পথচারীদের বিমোহিত করে শিমুল ফুল। আর সূর্যের খরতাপে সেদিকে তাকালে চোখে ভেসে ওঠে অনন্য সৌন্দর্য্য। আজ থেকে এক দশক আগেও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গাছে গাছে শোভা বর্ধন করতো এই শিমূল ফুল। তবে কালের বিবর্তনে ঋতুরাজ বসন্তের এখন আর যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমূল গাছ। মূল্যবান শিমূল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসলাম হোসাইন জানান, গ্রাম বাংলার এই শিমুল গাছ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিত। মানুষরা এই শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করতো। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোষক, বালিশ। শিমুলের তুলা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে, এমন নজিরও আছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছের।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com