রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ পঞ্চগড়ের চা চাষিরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩

কাঁচা চা পাতার নিম্ন দামে হতাশ চা বাগন মালিক ও চা শিল্পে পাতা সরবরাহকারীরা। বাগানের মালিকরা জানান, প্রতি মৌসুমে তারা ৬-৭টি রাউন্ডে বাগানের সবুজ কাঁচা চা-পাতা তুলে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু এই চা-পাতা বিক্রি করার সময় প্রতিটি রাউন্ডে বাগান মালিকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কখনো কারখানায় কাঁচা পাতার নিম্ন হারে দাম নির্ধারণে তার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বাগানের পাতা বিক্রি ও কারখানায় সরবরাহ করে তাদের হাতে কোনো টাকা থাকে না। বিশেষ করে চলতি মৌসুমের প্রথম ও শেষ রাউন্ডে বাগানের পাতা বিক্রির টাকা দিয়ে বাগান মালিক বা চাষিরা বাগান পরিচর্যার কাজও সম্পন্ন করতে পারেন না। এ দিকে আগামী জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ চা বোর্ড ইতোমধ্যে পঞ্চগড়কে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। চা নিলাম কেন্দ্রটির কার্যক্রম চালুর জন্য অফিসিয়ালভাবে এখন নানামুখী কর্মযজ্ঞ চলছে।
বিগত ২০০০ সালের দিকে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি লিমিটেড ও কাজী অ্যান্ড কাজী পঞ্চগড়ে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা-চাষ শুরু করে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তরা লের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে ক্ষুদ্র পর্যায়ে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমি নতুন করে চা চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) একটি উপকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ২০০১ সালের দিকে চা চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন থেকেই এসব জেলায় ক্ষুদ্র পর্যায়ে সমতলে সবুজ চা চাষ করা হচ্ছে। উত্তরা লে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে গত ২০২১ সালে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কেজি চা জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়। উত্তরা লে ২০১৯ সালে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬০ মিলিয়ন কেজি, ২০২০ সালে ১০ দশমিক ৩১ মিলিয়ন কেজি, ২০২১ সালে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কেজি। অন্য দিকে চট্টগ্রাম ভ্যালিতে ২০১৯ সালে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭৫, ২০২০ সালে ১১ দশমিক ২৩ ও ২০২১ সালে ৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। শুরু থেকে পঞ্চগড়ে গত ২১ বছরে চায়ের উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে ১৬১ বছর আগে শুরু হওয়া চট্টগ্রামকে। বর্তমানে যার পরিমাণ এক কোটি ৪৫ লাখ কেজি। চা বাগানের মালিকরা জানান, বছরে প্রতি মৌসুমে তারা ছয়-সাতটি রাউন্ডে বাগানের সবুজ কাঁচা চা-পাতা তুলে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু এই চা-পাতা বিক্রি করার সময় প্রতিটি রাউন্ডে বাগান মালিকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কখনো কারখানায় কাঁচা পাতার নিম্ন হারে দাম নির্ধারণ আর কর্তনের কারণে বাগানের পাতা বিক্রি ও কারখানায় সরবরাহ দিয়ে চাষিদের হাতে কোনো টাকা থাকে না। বিশেষ করে চলতি মৌসুমের প্রথম ও শেষ রাউন্ডে বাগানের পাতা বিক্রির টাকা দিয়ে চাষিরা বাগান পরিচর্যার কাজও সম্পন্ন করতে পারেন না।
চলতি বছরে বাগানে সবুজ চা পাতা তোলার প্রথম রাউন্ড মৌসুম শুরু হয়েছে। চা বাগান থেকে খসখসে শুকনা সবুজ কাঁচা পাতা তোলে কারখানায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু চা কারখানাগুলো প্রতি কেজি সবুজ কাঁচা পাতা প্রায় ১৬-১৯ টাকা দরে কেনার পাশাপাশি ৫-১০ শতাংশ হারে কর্তৃনপূর্বক চাষিদের মূল্য পরিশোধ করায় অর্থনৈতিকভাবে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সবুজ কাঁচা পাতার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আন্দোলন প্রতিবাদ করার পরও চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তাদের দাবি কারখানার মালিকরা প্রতি কেজি চা পাতা কমপক্ষে ২০-২৫ টাকা হারে ক্রয় করলে তাদের চাষাবাদে অর্থনৈতিক লোকসান কিছুটা কমবে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় আ লিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসাইন বলেন, দেশের উত্তরা লে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় বিপুল সম্ভাবনাময় গ্রিন অর্থনীতি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য চাষিদের ভালো মানের পাতা (দু’টি কুঁড়ি একটি পাতা) উৎপাদনপূর্বক কারখানায় সরবরাহ করতে হবে। কারখানায় সরবরাহকৃত সবুজ পাতা দ্বারা ভালো মানের চা প্রস্তুত করে বেশি দামে নিলামে বিক্রয় করা যায়। তখন চাষিরাও সবুজ পাতার ভালো দাম পায়। আগামী জুন মাসে পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু হলে উত্তরা লের চা শিল্পের মান আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া চা শিল্পের মানোন্নয়ন ও পাতার ন্যায্যমূল্য সঙ্কট উত্তরণের জন্য চা চাষি ও কারখানা মালিকদের একযোগে কাজ করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com