সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে এক ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়েছে। সেখানে তাকে গ্রেপ্তারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। চারদিকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। এর আগে ইসলামাবাদের আইজিপি ড. আকবর নাসির খানকে এক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। আদালত চত্বর থেকে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তারের ফলে বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে বলে এর আগে মন্তব্য করেন দেশটির প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ইস্যুতে আজ বৃহস্পতিবারই যথাযথ একটি অর্ডার ইস্যু করবে আদালত। এ বিষয়ে আদালত খুবই সিরিয়াস। তিনি আরও বলেছেন, আদালত থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে আদালত অবমাননা করেছে জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি)। জবাবে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব অভিযোগ করেছেন, আদালতের সঙ্গে ইমরান খানের ‘লাভ অ্যাফেয়ার্স’ বা প্রেমের সম্পর্ক আছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আদালতের সমালোচনা করে বলেন, যখনই তার কাছে কোনো ওয়ারেন্ট নিয়ে যাবেন, তখন কোনো জীবন বা অঙ্গই আর নিরাপদ থাকে না। যদি আহত পুলিশ সদস্যরা, যারা জনগণের নিরাপত্তার জন্য জীবনকে সামনে বাজি রাখেন, যদি তারা ন্যায়বিচার না পান, যে সেনা সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেন, যদি তিনি ন্যায়বিচার না পান, পক্ষান্তরে ওই ব্যক্তি- যে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন, তিনি যদি ছাড় পান, তাহলে দেশ শুধুই জ্বলবে।
আর কিছু নয়। ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট তাকে ছাড় দেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাকে রিমান্ডে পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা এ যাবতকালের সবচেয়ে দ্রুতগতির ছাড় দেয়ার ঘটনা।
বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হতে পারে, আশঙ্কা ইমরান খানের: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান নিজের জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কারাগারে তাকে বিষ প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে হত্যা করা হতে পারে। গত বুধবার এমন শঙ্কার কথা তিনি নিজেই প্রকাশ করেছেন বলে জিও টিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। তাকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। বুধবার নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কার কথা প্রকাশ করে ইমরান খান আদালতকে বলেন, কর্তৃপক্ষ এমন একটি ইঞ্জেকশন দেয় যা একজন ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলে। তিনি আশঙ্কায় আছেন যে, তার সঙ্গেও হয়তো এমনটা হতে পারে। আদালতে শুনানি চলাকালে ইমরান খান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. ফয়সাল সুলতানের কাছেই চিকিৎসা নেবেন বলে দাবি করেন। সে সময় তিনি বলেন, মাকসুদ চাপরাশিকে যে ধরনের শাস্তিমূলক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গেও এমন কিছু হোক তিনি তা চান না।
মালিক মাকসুদ আহমদ ওরফে মাকসুদ চাপরাশি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা এক হাজার ৬০০ কোটি রুপির অর্থপাচার মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ২০২২ সালের জুনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে পিটিআই। এর পাশাপাশি গত বছরের নভেম্বরে তার ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে এক অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টার পেছনে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও এর পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ইসলামাবাদের পুলিশ লাইন্সে অস্থায়ী আদালতের এক শুনানি চলাকালে ইমরান খান অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তানের আধাসামরিক রেঞ্জার্স বাহিনীর সদস্যরা আটক করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখানো হয়।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আটক করার পর একটি কালো টয়োটা হিলাক্স ভিগো গাড়িতে করে ইমরানকে রাওয়ালপিন্ডিতে এনএবির দপ্তরে নিয়ে যান রেঞ্জার্সের কর্মকর্তারা।
এদিকে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেফতার করার পরই দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইমরান খানের সমর্থকদের ‘রাষ্ট্রীয় শত্রু’ অ্যাখ্যা দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পিটিআইয়ের সমালোচনা করে শাহবাজ শরিফ বলেন, দলটির কর্মীরা যে অপরাধ করছে তা ক্ষমার অযোগ্য।