রাজবাড়ীর গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট কারখানার তৈরি বিভিন্ন ধরনের শতাধিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় ২৬ দেশে। গুণগত মানসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই হওয়ায় দিন দিন এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
পাট, হোগলা, খড়, ছন ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব নার্সারি পট, ফ্লোর ম্যাট, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঝুড়ি, টিফিন বক্স, পেট হাউজ, টিস্যু বক্স, ফাইল বক্স, ট্রে, ফুল-ফলের ঝুড়ি, পাপোশ, বাস্কেট, সিলিন্ডার বক্স, বাটিসহ শতাধিক পণ্য। এসব পণ্য উৎপাদনে কাজ করে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। এতে কারখানার আশপাশের তিন-চার ইউনিয়নের বেকারত্ব দূর হয়েছে।
জানা যায়, গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট কারখানাটি প্রথম ২০০৬ সালে ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এলাকার বেকারত্ব দূর করতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া গ্রামে দেড় একর জমির ওপর ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে কারখানার ভেতরে প্রায় ৭০০-৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই নারী। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে আরও প্রায় দুই হাজার শ্রমিক রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ পণ্য তৈরি করছেন, কেউ তৈরি পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। পরে ওইসব পণ্য রপ্তানির জন্য যাচাই-বাছাই করছেন অনেকে। যাচাই-বাছাই শেষে কার্টনে ভরছেন অন্যরা। কারখানাটিতে কর্মরত শ্রমিকের বেশিরভাই নারী। এক সময় যাদের অভাব-অনটনে দিন কেটেছে। অনেকে এখানে কাজ পাওয়ায় সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।
কারখানার শ্রমিক ছামেরা বেগম বলেন, করোনার পর অনেক সমস্যায় সংসার চলতো। এখানে চাকরি শুরুর পর ধীরে ধীরে সব অভাব দূর হয়েছে। এখন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারছি। সংসারের সমস্যা দূর হয়েছে।
শ্রমিক রুবি বেগম বলেন, প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই কাজ করছি। সুইং সেকশন থেকে আসা পণ্য চেক করি। এখানে আমার সন্তানরাও কাজ করে। অনেক ভালো আছি।
স্মৃতি নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আগে সংসারে অনেক অভাব ছিলে। মেয়েকে ভালো মতো খেতে দিতে পারতাম না। এখানে কাজ শুরুর পর থেকে মেয়েকে ভালো খাবার, পোশাকসহ অন্য চাহিদা পূরণ করতে পারছি। অনেক অসহায় মানুষ এখানে কাজ করে ভালো আছে।
সুইং সেকশনের দায়িত্বে থাকা মুরাদুন্নবি বলেন, সেকশনে প্রায় সাড়ে ছয়শ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে নারীই বেশি। এখানে কাজ করে অনেক অসহায় পরিবার এখন ভালো আছে। এখানে শতাধিক পণ্য তৈরি হয়, যা বিশ্বের প্রায় ২৬টি দেশে রপ্তানি হয়।
ফিনিশিং সুপারভাইজার গাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার সেকশনে প্রায় ৭৫ জন কাজ করে। তৈরি করা পণ্য চেক করার পাশাপাশি সুতা কেটে পরিষ্কারের পর কার্টন বক্স করা আমাদের কাজ।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাঈদ হোসেন বলেন, কারখানায় শ্রম আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা দেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ চার সেকশনসহ বাইরে হ্যান্ড ম্যাট মিলিয়ে মোট পাঁচ সেকশন রয়েছে। এসব সেকশনে সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে পাট ও হোগলা নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এবং স্থানীয়ভাবে খড়, ছনসহ অন্য কাঁচামাল আমদানি করে কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়- বলে জানান তিনি।
কারখানার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালে সাভারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হাকিম আলী সর্দারের নেতৃত্বে আজ এ পর্যায়ে এসেছে। নদী ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষের কথা ভেবে এবং বেকারত্ব দূর করার লক্ষে ২০১৫ সালে নিজ জেলা রাজবাড়ী বরাটের ভবদিয়ায় প্রায় দেড় একর জায়গার ওপর গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের কারখানা স্থাপন করেন। এখন কারখানায় প্রায় তিন হাজারের মতো শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের মান ভালো হওয়ার ইউরোপ, সৌদি, কুয়েত মিলিয়ে ২৬ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যারা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এই কাজ করে সচ্ছল হয়েছে। ফলে কারখানার আশপাশের ইউনিয়নের নারীদের বেকারত্ব দূর হয়েছে। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মিলে প্রবেশের রাস্তা প্রশস্ত করা গেলে আরও উন্নতি হতো। এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, ওই কারখানায় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য মানসম্মত হওয়ায় বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। বিসিক সব সময় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকে।