মানবজীবনে আদব বা শিষ্টাচার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলাম ফরজ বিধানগুলো পালনে যেভাবে তাকিদ দিয়েছে, তেমনি আচার-আচরণে বা ব্যবহারের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। রাসূল সা:-কে উদ্দেশ করে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘ইন্নাকা লা-আলা খুলুকিন আজিম’ অর্থাৎ- আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।
রাসূল সা: বলেন, ‘আমি তো প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য’। (কানজুল উম্মাল) শুধু তাই নয়, কুরআন-হাদিসের বাইরে ইসলামের সর্বশেষ নবীকে নিয়ে তাঁর প্রতিবেশী মক্কার কাফির-মুশরিকরা তাঁর শিষ্টাচারে মন্তব্য করেছে ‘আল-আমিন’ তথা বিশ্বাসী। (নবুওত প্রাপ্তির আগে)
উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহার নিয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে। আহার-পানীয় গ্রহণে, অন্যের সাথে কুশলবিনিময়ে, সালাম আদান-প্রদানে, অনুমতি গ্রহণে, ওঠাবসা, কথা বলা, আনন্দ ও শোক প্রকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মু’মিনের আচরণ কিরূপ হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তুমি ক্ষমার নীতি গ্রহণ করো। লোকদের সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলো।’ (সূরা আ’রাফ-৭/১৯৯) ‘যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে-ইমরান-৩/১৩৪) আনাস বিন মালেক রা: বলেন, ‘নবী করিম সা: কাউকে গালি দিতেন না, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করতেন না এবং কাউকে অভিশাপ দিতেন না। কাউকে তিরস্কার করতে হলে শুধু এটুকু বলতেন, ‘তার কী হয়েছে। তার কপাল ধুলায় ধূসরিত হোক। তিনি আরো বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১০ বছর রাসূল সা:-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। তিনি আমার ব্যাপারে কখনো ‘উহ্’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। আর তিনি কখনো বলেননি, তুমি কেন এটি করেছ কিংবা এটি কেন করোনি?’ কারো সাক্ষাতে আমরা অভিবাদন বলি। এর ব্যবহারিক রূপ ‘আসসালামু আলাইকুম’। এটি দয়া, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, প্রার্থনা প্রভৃতি অর্থ বহন করে থাকে। ইসলামের বিধান অনুসারে শিষ্টাচারের এই পবিত্র রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতি পরস্পর ভাইয়ের মতো জীবনযাপন করে থাকে।
রাসূল সা: সাহাবিদের সাথে ও তাঁর অধীনস্থদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতেন। আর মহান আল্লাহ রাসূলের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা আহজাব-৩৩/২১) সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সা:-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও অনুকরণ করা। লেখক : আলেম ও সাংবাদিক