মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কয়রায় উপকুলের মানুষ নানান প্রতিকুলতার মধ্যে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে কাপাসিয়ায় ৫০ জন সহকারী শিক্ষকের যোগদান : ফুলেল শুভেচ্ছা কমলগঞ্জে ইসলামী যুব মজলিসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক এবং সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সনাক-টিআইবির মানববন্ধন ফটিকছড়িতে ইফতার মাহফিলে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আমরা ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই মাদারীপুরে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেয়া হবে জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা নওগাঁয় ২৫০ জন কুরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা

শিশুদের শিক্ষার প্রথম ১ হাজার দিন

ড. শিবানন্দ সিএস
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

প্রথম কান্না, প্রথম হাসি, প্রথম অর্ধ-উচ্চারিত শব্দ কিংবা গুটি পায়ের প্রথম ধাপÍজীবনের এই ‘প্রথম’ মুহূর্তগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। এ মুহূর্তগুলোকে আমরা আজীবন আমাদের স্মৃতিতে ধরে রাখতে চাই। কিন্তু এই ‘প্রথম’ এর সময়গুলোতে বাচ্চাদের বিকাশে কি আমরা আদৌ যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছি? গর্ভধারণের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। গর্ভকালীন সময় থেকে জন্মের পরবর্তী ১ হাজার দিন শিশুর ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে প্রবেশ করার প্রথম মুহূর্ত থেকেই শিশুরা তাদের চারপাশের সবকিছু লক্ষ করতে থাকে, শিখতে থাকে। নতুন মুখগুলো পর্যবেক্ষণ করা থেকে শুরু করে বাবা-মায়ের পরিচিতি অনুভব করা পর্যন্ত এই তারা প্রতিনিয়ত শেখার মধ্যেই থাকছে। এ সময় শিশুদের মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশে কিছু বিষয় অনুসরণ করা এক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, জন্মের সময় থেকে মস্তিষ্কে ‘হিপোক্যাম্পাস’-এর বিকাশ ঘটে, যা স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব রাখে। এর পাশাপাশি, জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই ‘ভিজ্যুয়াল ও অডিটরি করটিসেস’-এর বিকাশ হয় এবং জন্মের ১ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্কের ভাষা শেখার ক্ষমতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এছাড়াও এই সময়ে মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের প্রাথমিক বিকাশ ‘উচ্চ প্রক্রিয়াকরণ’ ক্ষেত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেখা গেছে, একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের ৮০ শতাংশ জীবনের প্রথম ১ হাজার দিনের মধ্যে ঘটে, যা মানুষের জীবনের প্রথম ৩ বছরকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য ‘আর্লি ইয়ার্স লার্নিং’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্রুত বর্ধনশীল এই বিশ্বে আজ থেকে ২০ বছর পরে কী ঘটবে তা এখনই ধারণা করা প্রায় অসম্ভব। তাই এখনকার শিশুদের জন্য শুধু একাডেমিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়; এই ভবিষ্যতের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে মৌলিক দক্ষতার ভিত্তিতে, যা ‘স্টিমুলেশন’-এর মাধ্যমে সম্ভব। খেলাধুলার পাশাপাশি একসঙ্গে কথা বলা অথবা গান করা শিশুদের জ্ঞানার্জনের সক্ষমতা তৈরিতে অনেক কার্যকর হতে পারে, যা ভবিষ্যতে তাদেরকে পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে।
এসবের মধ্যেও বিবেচনায় রাখতে হবে যে এ বয়সের শিশুদের মধ্যে মানসিক এবং শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই ‘টক্সিক স্ট্রেস’-এর বিরূপ প্রভাব পড়ার ঝুঁকি থাকে। অত্যধিক চাপ এবং ভুল পদ্ধতি থেকে উদ্ভূত এই টক্সিক স্ট্রেস মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে এনে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকারক ভূমিকা পালন করতে পারে। কাজেই অভিভাবকদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের সন্তানদের শিক্ষকেরা শৈশবকালীন শিক্ষা নিয়ে সঠিক ধারণা রাখেন। শিশুর জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলোতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কোনো প্রভাব যেন না পড়ে, তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত এবং মোকাবিলা করতে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এবং পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হলো ‘মন্টেসরি’। মন্টেসরি পদ্ধতি একটি নির্দিষ্ট স্টাইল, যা মৌলিক হিসেবে বিবেচিত পাঁচটি ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে শিশু উন্নয়ন ঘটায়। স্ব-নির্দেশিত কার্যক্রম, হাতে-কলমে শিক্ষা এবং খেলাধুলার ওপর ভিত্তি করে এটি ছোট বাচ্চাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া, এই পদ্ধতি শিশুদেরকে গোষ্ঠীগত এবং ব্যক্তিগত কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানার্জন করতে এবং তাদের সর্বাধিক সম্ভাবনা বিকাশ করতে সক্ষম করে তোলে। শ্রেণিকক্ষের নিরাপত্তার মধ্যে মন্টেসরি শিক্ষার মাধ্যমে ছোট শিশুরা ভাষা শিক্ষা, গণিত, বিজ্ঞান, সংগীত, সামাজিকতা ও অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শী হতে শিখে। এই শ্রেণিকক্ষের নিরাপদ পরিবেশে শিশুরা নিজেদের এবং অন্যদের ওপর আস্থা রাখতে শেখে। মন্টেসরি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন সমস্যা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা লাভ করে এই শিশুরা। পাশাপাশি বাউন্সিং থিংস, জয়েনিং এলিমেন্টস ও হস্তনির্মিত বস্তু তৈরি করার মতো আনন্দপূর্ণ ও মজার সব গেমের মাধ্যমে শিশুরা শিক্ষা লাভ করে। এছাড়াও শিশুরা খোলামেলা পরিবেশে একা, শিক্ষক অথবা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে নিজেদের পছন্দমতো কার্যক্রম বাছাই করতে পারে। সফলভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করলে শিশুদেরকে প্রশংসার মাধ্যমে আরো উৎসাহিত করা হয়। শিশুদের চোখের পেশি শক্তিশালী করা, মোটর স্কিলের বিকাশ ঘটানো এবং তাদের কল্পনা করার ক্ষমতাকে অনুপ্রাণিত করাসহ প্রতিটি শিশুর মধ্যে বাস্তব জীবনের দক্ষতা তৈরিতে নির্দিষ্ট কার্যক্রম ডিজাইন করা হয়। শিশুদের জীবনের শুরুর দিকের সময়ের ওপর আলোকপাত করে ঢাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রাক-প্রাথমিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রথম তিন বছরের শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাঠামোগত পাঠ্যক্রম ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক মন্টেসরি ল্যাব গড়ে তুলেছে। এ ল্যাবে শিশুদের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধিতে এবং তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ করে গড়ে তুলতে উপযোগী বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ‘বিনোদনের মাধ্যমে শেখা’র গুরুত্ব নিয়ে আমরা অনেকেই শুনে থাকলেও শিশুর বিকাশে কাঠামোগত পাঠ্যক্রমের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষায়িত কার্যক্রম ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তায় শিশুদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা আগামী প্রজন্মকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে পারি।
অভিভাবক ও শিক্ষক হিসেবে নতুন প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই। এই বিশাল কর্তব্য পালনে কোনো রকমের অনুশোচনামূলক সিদ্ধান্ত একেবারেই কাম্য নয়। লেখক: অধ্যক্ষ, ডিপিএস উত্তরা, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com