বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও নাট্য সংসদের উদ্যোগে মরহুম চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুনের ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে গত ২৬ মে স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুুষ্ঠানে মরহুম চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুনের জীবনের নানাদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। বক্তারা বলেন মরহুম চিত্রনায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ছিলেন পরিচ্ছন্ন নিবেদিত একজন সংস্কৃতি কর্মী, জীবনের একটি পর্যায়ে এসে তিনি উপলব্ধী করেন যে, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই, তাই তিনি তাঁর পেশাগত জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আদর্শিক সংস্কৃতিকে লালন করে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দেশের তরুণ যুবকদের কে নৈতিকতা সম্পন্ন দক্ষ সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও নাট্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা ও আবৃত্তিকার মুস্তাগিছুর রহমানের স লনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএনএস এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অভিনেতা ও আবৃত্তিকার জনাব মাহবুব মুকুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণ করে সিএনএস এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হাবীব পাইলট, বিশিষ্ট অভিনেতা ও সাংবাদিক জনাব স্বজন জহির। জনপ্রিয় অভিনেতা নাট্য সংগঠক জনাব ফারুক খান, বিশিষ্ট অভিনেতা, পরিচালক, কৌতুক অভিনেতা জনাব আব্দুল গণি বিদ্বান, ও তরুন নাট্যকার, নির্দেশক, লেখক ও অভিনেতা জনাব হোসনে মোবারক ও বিশিষ্ট অভিনেতা, পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম।
১৯৭৮ সালে নূর মোহাম্মদ টেনা সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক কালান্তর’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি ‘কালান্তর’ এর কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবেও কাজ করেন। সংস্কৃতিমনা শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ১৯৮০ সালে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তার প্রথম অভিনীত ছবি ‘তরুলতা’। প্রথম ছবিটিতেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তাঁর আরো অনেকগুলো জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ঈদ মোবারক’, ‘ভেজা চোখ’, ‘নিকাহ’, ‘কুসুমকলি’, ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘নিঃস্বার্থ’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘স্বর্গনরক’, ‘ত্যাগ’, ‘চাকর’, ‘জিদ’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘নরম-গরম’, ‘গৃহলক্ষ¥ী’, ‘এ জীবন তোমার আমার’, ‘খোঁজ-খবর’, ‘ছোবল’, ‘কসম’, ‘দিদার’, ‘পরিচয়’ ‘মাসুম’, ‘কুসুমকলি’, ‘দস্যু রাণী ফুলন দেবী’, ‘জেলহাজত’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’, ‘সর্দার’, ‘অন্ধবধূ’, অনন্য, চ্যালেঞ্জ, চন্দনা, ডাকু, স্যারেন্ডার, বাবা কেন চাকর প্রভৃতি। নায়ক ছাড়াও তিনি সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। ২০০০ সালে তিনি সিনেমার অভিনয় থেকে সরে আসেন। তারপরও তিনি স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। নায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন তার বর্নাঢ্যজীবনের রঙ্গিন স্বপ্নকে ত্যাগকরে সত্যিকারের সুস্থধারার সংস্কৃতিতে নিজেকে সোপর্দ করেন। গড়ে তোলেন সুস্থ সংস্কৃতির নতুন মিনার।
তাঁর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ এ প্রজন্মের সাংস্কৃতিক কর্মীদেরকে দক্ষতার সাথে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বক্তারা সকল সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়ার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম সমাপ্ত করা হয়।