দুর্বৃত্তায়নের সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে জনবান্ধব বাজেট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। গত রোববার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেটপূর্ব প্রেস ব্রিফিংয়ে দলটির নেতারা এ আহ্বান জানান। এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের স ালনায় ব্রিফিংয়ে সভাপতিত্ব করেন পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। অতিথি বক্তা ছিলেন অর্থনীতি ও উন্নয়নবিষয়ক গবেষক জিয়া হাসান ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শক আবুল কালাম আজাদ।
ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, সরকারের ভিতরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের ফলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তথা জীবনযাত্রার ব্যয় এত বেড়ে গেছে। বাজারে গিয়ে কাঁদতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিপরীতে লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্য সরকারদলীয় মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। তাই, নতুন অর্থবছরের বাজেট হতে হবে এই সিন্ডিকেট ভাঙার বাজেট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বাজেট। জনগণকে যেন বাজারে গিয়ে কাঁদতে না হয়, বরং তাদের মুখে হাসি ফোটে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের বাজেট দিতে হবে। মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে যেন সম্পদ কুক্ষিগত না হয়, তার বিপরীতে সাম্য ও সমতা বিধানের বাজেট দিতে হবে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি হলো কৃষি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানিবাজার। নতুন ভিসানীতির কারণে বাংলাদেশ পশ্চিমে বড় ধরনের ভাবমূর্তির সঙ্কটে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। এর প্রভাব রপ্তানি খাতেও পড়তে পারে। তখন ডলার সঙ্কট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে না বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে বাজেটে দেশের প্রধান দুই রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে রপ্তানি ধরে রাখতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার দাবি জানাচ্ছে এবি পার্টি।
এবি পার্টির নেতারা বলেন, বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও অকটেনের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। আমরাও বলতে চাই, জনগণ যখন মূল্যস্ফীতির চাপে কষ্ট করছে, তখন বিপিসিকে মুনাফায় রাখা মোটেই যৌক্তিক হবে না। আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ উঠে গিয়েছিল। যদিও প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এটা উঠে এসেছে যে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। যদি এমনটা চলতে থাকে, তাহলে ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেশের কোনো কাজে লাগবে না। জার্মান ফেডারেল সরকারের শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান বলেন, ঋণ করে ঘি খাওয়ার বাজেট নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বাকিটা দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করা হবে। ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে অবাস্তব বলে মনে করি। করন্যায্যতা বা সাম্য নিশ্চিত করার জন্য যার আয় ও সম্পদ বেশি, তার থেকে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদ কর আদায় জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে কর ন্যায্যতার বিকল্প নেই।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর, আয়কর, অগ্রিম আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, আবগারি শুল্ক ইত্যাদির হার প্রতিবছর পরিবর্তন হলে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, বিশেষ করে খরচ ও মূল্যের তালিকা করা দুরুহ হয়ে পড়ে। এতে বাজেটকেন্দ্রিক ফটকা কারবার, হোর্ডিং ইত্যাদি বেড়ে যায়। তাই, উপরোক্ত ৫টি হারের ব্যাপারে ৫ বছরের স্থিতিশীল নীতিমালা ঘোষণা করা আবশ্যক। বাজেট বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে এবি পার্টি বাজেটবিষয়ক সংসদ গঠনের প্রস্তাব করেছে। জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদাধিকার বলে এর সদস্য হবেন। অর্থমন্ত্রী পদাধিকার বলে স্পিকার থাকবেন। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্যানেল স্পিকার হবেন। এছাড়া, প্রাসঙ্গিক মন্ত্রী ও সুশীলসমাজের সদস্যরা, বিশেষ করে দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদগণ অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন বাজেট বিতর্কে। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন—এবি পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, এবি যুব পার্টির সদস্য সচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, দিনাজপুর জেলার সদস্য সচিব মেহেদী হাসান চৌধুরী পলাশ, লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন ও সদস্য সচিব চৌধুরী সাকিব, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গাজী নাসির, সফিউল বাসার, বারকাজ নাসির আহমাদ, আব্দুল হালিম নান্নু, আমেনা বেগম, অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান, ছাত্রনেতা মোহাম্মদ প্রিন্স, অপি তালুকদার, সুমাইয়া শারমীন ফারহানা, আমীরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।