জিডিপি-মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। এখন বাজেটে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিল। অথচ তা নেয়া হয়নি। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় যে চমক দেখানো হয়েছে, তা উচ্চাভিলাষী, বাস্তবসম্মত নয়।
গতকাল শুক্রবার (২ জুন) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের বৈদেশিক আয় নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নিম্নমুখী। বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি খাতে ব্যাপক ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত দুই অর্থবছরের উন্নয়নের যে সূচক দেখানো হয়েছে, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ এ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ভাগ ধরা হয়েছে। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ ভাগ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ ভাগ করা হয়েছে।
আমরা যদি সরকারি বিনিয়োগের হার দেখি, সেটা ৬ দশমিক ২ ভাগ ধরা হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির অংশ হিসেবে ২৭ দশমিক ৪ ভাগ ২০২৪ সালের জন্য ধরা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে যেটা ধরা হয়েছিল, সেটা কম হয়েছে এখন পর্যন্ত। সেটা ২১ দশমিক ৮ ভাগ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ ভাগ কিভাবে হবে? সেটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
মুদ্রা খাত ও মূল্যস্ফীতির ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ ভাগ ধরা হয়েছে। এই বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে, সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সাথে মিলছে না। এছাড়া ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে, সেটা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কিভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বলা হয়েছে, ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে সেটা ৬ ভাগ হবে। এই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আমাদের কাছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনে হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় আমদানি প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে পারফরম্যান্স ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেখা গেছে, তার থেকে আরো বেশি হবে বলে নতুন অর্থ বছরের বাজেটে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ‘উন্নয়নের দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ব্যয় ধরেছেন সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ২ ভাগ। জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ লাখ ছয় হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও জিডিপির ১৫ দশমিক ২ ভাগ ধরে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়। চলতি বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় সাড়ে ৭ ভাগ আর মূল্যস্ফীতি ৬ ভাগের মধ্যে রাখার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী ১৯৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্যে বাজেটের ব্যয়ের বিপরীতে পাঁচ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও বৈদেশিক অনুদান হিসেবে আসবে তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অনুদানসহ মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে অনুদান ছাড়া মোট ঘাটতি ধরা হয় দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ধরা হয় দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ ভাগ।
ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ৩২ হাজার ৩২ কোটি টাকা; সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকার।