চলছে গ্রীষ্মকাল। এ ঋতুকে ফলের ঋতুও বলা হয়ে থাকে। গত এক-দেড় মাস বাজারজুড়ে ছিলো তরমুজ, আনারস, লিচুসহ নানা ফলের আধিপত্য। এখন ফলের দোকানগুলোতে আম এবং কাঠালের ছড়াছড়ি। অন্যান্য ফলের সাথে বিভিন্ন রকমের আমের সাজানো-গোছানো উপস্থিতি আলাদা করে নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন ফলের দোকানে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি আড়ত ও পাইকারি দোকানে হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, হিমসাগর, গোপালভোগ, লবনা, ল্যাঙড়া, মধুমতি, গুটি আমের আদিখ্যেতা একটু বেশি। সাথে স্থানীয় আম তো আছেই। এছাড়াও শহরের পোস্ট অফিস রোড, নতুন বাজার, ভানুগাছ রোড, স্টেশন রোডের ফুটপাতগুলোতে দেখা মিলছে শ্রীমঙ্গলের আনারস, জাম, দিনাজপুরের লিচু এবং আপেল, পেয়ারা নাশপাতি ইত্যাদি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাজারগুলোতে এখন এসব ফলের সমাহার। লিচুর সময় এখন শেষের দিকে। পুরনো লিচু হওয়ায় গায়ে কালো আঁচর থাকে। এতে লিচু ক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা। আনারসের দাম এখন চড়া হলেও রসেভরা ফল ক্রয় করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। আঙ্গুর, কমলা, মাল্টা এবং আপেলে দাম বেশ চড়া। তাই বিত্তবান ছাড়া নি¤œ শ্রেণির মানুষ এসব ফলে হাত দিচ্ছেন না। ভানুগাছ এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবেন আব্দুস সামাদ নামের মুসলিমবাগ এলাকার এক যুবক। চৌমুহনা থেকে ফল কিনতে গাড়ি থেকে নেমেছেন তিনি। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, অনেক বেশি ফলের সমাহার আছে দোকানে। তবে লিচুগুলোর উপরে কালো দাগ পড়ে আছে, তাই লিচু কিনিনি। আপেল নিয়েছি। আম আছে। বেশ কয়েকটা দোকান দেখলাম সবগুলোতেই প্রায় ৭/৮ রকমের আম আছে। হিমসাগর, গোপালভোগ এবং ল্যাঙড়া আম কিনেছি। তবু দাম একটু বেশিই মনে হলো। তিনি বলেন পোস্ট অফিস রোডে যাচ্ছি কাঠাল ও আনারস কিনতে। পোস্ট অফিস রোডের ফল ব্যবসায়ী শফিক মিয়া জানান, শ্রীমঙ্গলের বাজারে প্রচুর আম এসেছে। কিন্তু ক্রেতা কম। মানুষজন স্থানীয় আম, নিজের গাছের আম এখনো খাচ্ছেন। সপ্তাহ দশদিনের মাথায় এসব আম শেষ হয়ে গেলেই বাজারের দোকানের আমে নজর পড়বে ক্রেতাদের, তখন বিক্রি বাড়বে। লিচুও আছে আমার দোকানে। লিচুর শেষ সময়। উপরের আস্তরণে একটু দাগ এখন থাকবেই। তবে এ দাগ বাহিরে আছে ভেতরে নয়। কাঠাল এবং আনারসও আছে। আনারসের সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন বড় আনারসের হালি ২৫০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বড় এবং মাঝারি সাইজের কাঠালের দাম প্রতি পিছ ১০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে ছোট কাঠাল ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। আম কিনতে আসা অঞ্জন দেবনাথ বলেন আমি ১ কেজি হিম সাগর আম কিনছি ১৩০ টাকা দিয়ে। ২ কেজি ল্যাঙড়া আম কিনছি ১৩০ টিকা দিয়ে। তিনি বলেন বাজারে ফরামালিন আমে ভরা। শহরের চৌমুহনায় জাম বিক্রি করতে দেখা যায় মনসুর আলী নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়িকে। দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন এখন দাম কিছুটা বাড়তি। ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি করছি। কেউ বেশি নিলে কিছুটা কমে বিক্রি করে দেই। দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গরমে জাম গাছে ওঠানোর মতো কামলা পাচ্ছি না। পেলেও দিগুণ কামলা খরচ গুণতে হচ্ছে। তিনি বলেন আমি প্রতি বছরই ফলের মৌসুমে আম ও জাম বিক্রি করে সংসার চালাই। কালিঘাট রোডের দীর্ঘদিন ধরে মুদি দোকানের ব্যবসা করছেন হোসেন মিয়া। ফলের মৌসুমে এবারও বাড়তি যোগ করেছেন আম। বিকেলে এক ক্রেতাকে দেখা যায় আম কিনতে। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন ল্যাঙড়া আম ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি কিনেছি। আমের গন্ধ ও রং দেখে মনে হয়েছে ফরামলিনমুক্ত। বাসায় নিয়ে দেখি, যদি ভালো হয় তাহলে আরো কিনবো। কালিঘাট রোডে কাঠাল বিক্রি করছেন মুহম্মদ কালু গাজি। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, এবার প্রচন্ড গরমে কাঠালের ক্রেতা কম। বৃষ্টি হলে তুলনামূলক বেশি কাঠাল বিক্রি করতে পারতাম। মূল্য জানতে চাইলে তিনি বলেন কাঠালের সাইজ অনুযায়ী দাম। কোনোটা ৩০ টাকা, কোনোটা ৫০ আবাে কোনোটা ১০০-২৫০ পর্যন্তও রয়েছে। ছোট, মাঝারি এবং বড়। এসব সাইজ অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম নিচ্ছি।