পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আশানুরূপ দেখা মেলেনি পর্যটকদের। গরমের তীব্রতার কারণে গত দুই মাস ধরে পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় দর্শনার্থীদের সমাগম ছিলনা বললেই চলে। কোরবানির ঈদে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল কোরবানির ঈদের বন্ধে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠবেন তারা। কিন্তু চলমান ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকদের দেখা পায়নি চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন বলে জানান তারা। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে গত দুইদিনের তুলনায় শনিবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ও টিলায় স্থানীয় পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল বিকেলে শহরের ভানুগাছ রোডে অবস্থিত বধ্যভূমি ৭১, এমআর খান চা বাগানে অবস্থিত দার্জিলিং টিলা, রামনগরে অবস্থিত আদি নীল কণ্ঠ চা কেবিন, গরম টিলায় স্থানীয় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। তবে পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত টি মিউজিয়াম (চা জাদুঘর, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), বরুণার বাইক্কা বিল, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, ভাড়াউড়া চা বাগান লেক, লাল টিলা, হরিণ ছড়া গল্ফ মাঠ, গরম টিলা, হজম টিলাসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটে গত তিন দিনে পর্যটকদের উপস্থিতি কম ছিল বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন ঘুরেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি কম পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, টি মিউজিয়াম এবং সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, গত দুদিনের তুলনায় গতকাল পর্যটক সমাগম কিছুটা বাড়লেও এর মধ্যে স্থানীয়দের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদে পর্যটক আসার অন্যতম বাধা ছিল বৃষ্টি। বৈরি আবহাওয়ার কারণেই মূলত পর্যটকদের আনাগোনা কম ছিল। গতকাল রবিবার পর্যন্ত শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোয় যেসব পর্যটকরা এসেছেন তাদের একটি বড় অংশ স্থানীয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তুলনামূলক কম পর্যটক এসেছেন। বিশেষ করে গত ঈদের তুলনায় এবারের ঈদের ছুটিতে তুলনায় তা কম। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শ্রীমঙ্গলকে নিয়ে আলাদা করে ব্র্যান্ডিং না করা, সন্ধ্যার পর কোন বিনোদন ব্যবস্থা না থাকা, হোটেল রির্সোটের অত্যাধিক ভাড়া, পর্যটন তথ্য কেন্দ্র না থাকা এবং নতুন কোনো পর্যটন কেন্দ্র সৃৃষ্টি করতে না পারা। শ্রীমঙ্গলের ‘গ্রীনলিফ গেস্ট হাউজের’ মালিক এসকে দাশ সুমন বলেন, আমরা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে অনেক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিয়েছি। অনেক অফার দিয়েছি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কম। আর পর্যটক যদি কম আসে তাহলে আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয় না। এদিকে ঈদ উপলক্ষে হোটেল-রিসোর্টে বুকিং কম হওয়ার কথা জানান শ্রীমঙ্গল এলাকার ‘এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের’ মালিক সজল দাশ। তিনি বলেন,শহর ও শহরের আশপাশের হোটেল, রিসোর্টগুলো অধিকাংশ ফাঁকা পড়ে আছে। আমরা ঈদের অপেক্ষায় ছিলাম।
কিন্তু অন্যান্য বছর ঈদের ১০ দিন আগে থেকেই রুম বুকিং হয়ে যায়। কিন্তু এবার আশানুরূপ বুকিং আসেনি। হবিগঞ্জ রোডে অবস্থিত টি হেভেন রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার মো. নূরুল আলম টিটু গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমাদের অবস্থা ভালো নয়। ৩০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ রুম খালি পরে আছে। এভাব হলে পর্যটন ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। চলতি মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা গত মৌসুমের চেয়ে কম জানিয়ে স্থানীয় পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ সংবাদকর্মীদের বলেন, গত দুই বছর ধরে শ্রীমঙ্গলে পর্যটক কম আসছেন। এর কারণ হলো আমাদের ট্যুর অপারেটররা দেশের পর্যটন স্পটগুলোকে প্রমুট করছেন না। তারা দেশের পর্যটকদের বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এখান থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। তা না হলে এই শিল্পে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এছাড়া নতুন করে কোন বিনিয়োগকারী আসবেন না। তবে পর্যটক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন শ্রীমঙ্গল অন্যতম একটি পর্যটন শিল্পাঞ্চল। উপজেলার সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকরা যাতে সুন্দর এবং নির্বিঘেœ ভ্রমণ করতে পারেন, তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে।