রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

চিকিৎসকদের জন্য মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
চিকিৎসা একটি মহান পেশা। অনেকে এটাকে পেশা না বলে সেবা বলতে পছন্দ করে। এই পেশায় নিয়োজিতদের যেমন অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তেমনি নিয়ত শুদ্ধ থাকলে তাদের পুরস্কারও অনেক বড় হয়। যেহেতু আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ০১)
এই হাদিসের আলোকে কেউ যদি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করে, কোরআন-হাদিসে বর্ণিত রোগীর সেবার ফজিলত পাওয়ার আশা রাখে, তাহলে ইনশাআল্লাহ তারা তাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অগণিত ফজিলত অর্জন করতে পারে।
নি¤েœ রোগীর সেবার কয়েকটি ফজিলত তুলে ধরা হলো, যেগুলো চিকিৎসকরা খুব সহজে অর্জন করতে পারে। শুধু চিকিৎসকরাই নয়, যারা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত কিংবা যারা রোগীদের চিকিৎসা খরচ দিয়ে সহযোগিতা করেন, আত্মীয়দের মধ্যে যারা রোগীর সেবা করেন, সবাই এই ফজিলতগুলো অর্জন করতে পারে।
জান্নাতে ফল আহরণের শামিল : রোগীর সেবা করা জান্নাতে ফল আহরণের শামিল। যারা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত, তারা বিশুদ্ধ নিয়তে রোগীর সেবা করে এই ফজিলত অর্জন করতে পারেন। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭) ডাক্তার/নার্সরা প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী দেখতে তাদের কাছে যেতে হয়, যদি তারা এই হাদিসের ওপর আমল করার নিয়তে রোগীকে দেখেন এবং সময় নিয়ে দেখেন তাহলে তারাও এই ফজিলত পাবে ইনশাআল্লাহ।
মাঝেমধ্যে দেশে কোনো রোগের প্রকোপ দেখা দিলে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের ছুটি বাতিল হয়ে যায়, তাদের উচিত তখন বিরক্ত না হয়ে এই হাদিসের ফজিলত স্মরণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আন্তরিকতাসহ রোগীদের সেবা করা।
ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় : রোগী দেখতে গেলে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। সুওয়াইর (রহ.) থেকে তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার হাত ধরে আলী (রা.) বললেন, আমার সঙ্গে চলো, অসুস্থ হুসাইনকে দেখে আসি। আমরা তার কাছে গিয়ে মুসা (রা.)-কে হাজির পেলাম। আলী (রা.) বলেন, হে আবু মুসা, আপনি কি রোগী দেখতে এসেছেন, না এমনি বেড়াতে এসেছেন? তিনি বলেন, না, রোগী দেখতে এসেছি।
আলী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালবেলা দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৯)
হাসপাতালের ডাক্তাররা অন্তত সকাল-সন্ধ্যা দুইবার রোগী দেখতে রাউন্ডে জান, যদি তারা এই হাদিসের ওপর আমলের নিয়তে কাজটি করেন, তাহলে তারাও ২৪ ঘণ্টা ফেরেশতাদের দোয়া পেতে পারেন।
জান্নাতে বাসস্থান তৈরি হয় : আমরা জানি, মসজিদ নির্মাণের বিনিময়ে জান্নাতে বাসস্থান তৈরি হয়। যারা মসজিদ নির্মাণের সামর্থ্য নেই, তারা রোগীর সেবা করেও জান্নাতে বাসস্থানের ভাগিদার হতে পারেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি রোগীকে দেখতে গেলে আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী তাকে ডেকে বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পথচলা কল্যাণময় হোক এবং তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্ধারণ করে নিলে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪৩) এই হাদিসের ওপর আমল করা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের জন্য বেশ সহজ।
আল্লাহর রহমত পাওয়া যায় : জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.)-এর বর্ণনা, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ রোগী দেখতে যায়, তখন সে আল্লাহর রহমতের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অতঃপর যখন সে সেখানে বসে, তখন সেই রহমত তার ভেতরে অবস্থান করে কিংবা এই রকমই কিছু তিনি বলেছেন। (মুয়াত্তা মালিক) চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় যথাযথভাবে রোগীর সেবা করে, তাদের দেখভাল করে, তাহলে তারাও আল্লাহর রহমত পেতে পারে।
রোগীদের দোয়া পাওয়া যায় : আন্তরিকভাবে রোগীদের সেবা করলে তাদের দোয়া পাওয়া যায়। যা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, নবী (সা.) আমাকে বলেন, তুমি কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তাকে তোমার জন্য দোয়া করতে বলো। কেননা তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪১) চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা রোগীদের দোয়া নেওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি পান।
জান্নাত পাওয়া যায় : যেসব কাজ করলে জান্নাত পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি হলো, রোগীর সেবা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আজ তোমাদের মাঝে কে সিয়াম পালনকারী? আবু বাকর (রা.) বললেন, আমি। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আজ তোমাদের মাঝে কে একটা জানাজাকে অনুসরণ করেছ? আবু বাকর (রা.) বললেন, আমি। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মাঝে কে একজন মিসকিনকে আজ খাবার দিয়েছ? আবু বাকর (রা.) বললেন, আমি। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আজ তোমাদের মাঝে কে একজন অসুস্থকে দেখতে গিয়েছ? আবু বাকর (রা.) বললেন, আমি। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, যার মধ্যে এ কাজগুলোর সংমিশ্রণ ঘটেছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৬০৭৬)
মহান আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে ইখলাসের সহিত তার দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। এবং আমাদের সবাইকে বেশি বেশি রোগীর সেবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন ( উৎস:কালের কণ্ঠ)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com