সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

স্থায়ী ক্যাম্পাস পাচ্ছে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে গড়ে উঠছে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও ও হাজরাই মৌজায় ৮০ দশমিক ৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় করা হবে। নির্মাণ করা হবে ভূমি উন্নয়নসহ ২টি আবাসিক ও ১০টি অনাবাসিক ভবন। সঙ্গে থাকবে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। সরকারি চতুর্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এটি। দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি আগামী ২০২৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে একনেকে “সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন” প্রকল্প অনুমোদন পায়। পরিকল্পনা কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সভায় সরকার সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনসহ কয়েকটি সংশোধনী আনতে আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এই আইন পাস হলে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট’। ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন এ সব তথ্য জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী সিলেটে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া ২ হাজার ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করবে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য ৮০ দশমিক ৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় করা হবে। ভূমি উন্নয়নসহ ২টি আবাসিক ও ১০টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। পরামর্শক ব্যয়সহ চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। সরকারের ৮ম প বার্ষিক পরিকল্পনার ১০.৪.২ অনুচ্ছেদে, ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়সমূহে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো এবং স্নাতকোত্তর স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রসারে প্রত্যেক বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা’ করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যা সরাসরি আলোচ্য প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কমিশন আরও মনে করে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ৮ম প বার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় চিহ্নিত সূচকগুলোর অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, একনেকের অনুমোদন প্রার্থনা করে পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও এর আশেপাশের প্রায় দেড় কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ চালুকরণ এবং উন্নতমানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা জনশক্তি ও অন্যান্য সুবিধাদি বাড়ানো সম্ভব হবে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার জন্য উদ্যোগী বিভাগ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও আইএমইডি কর্তৃক নিবিড় তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেটি অনুসরণ করা যেতে পারে বলেও মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতায় সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী সিলেটে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও এতদিন একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হয়ে আসছিল। প্রকল্পটি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এর নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হলে এ অ লের দেড় কোটির বেশি মানুষের স্বাস্থ্য সেবাসহ এ সংক্রান্ত গবেষণা কাজ করা সহজ হবে।
উল্লেখ্য, বাণিজ্যিক কারণে দেশে অনেক মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশের কারণে অনেক বন্ধ মেডিক্যাল কলেজ চালু করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে চিকিৎসার মান ঠিকমত পালন করা হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ অনুসারে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ইতোমধ্যে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেই নির্দের্শের ৪র্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হলেও আশা করা হচ্ছে দেড় বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো নিয়ে চালু হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিবছর যে শুধুমাত্র হাজারের উপর ছাত্রছাত্রী উন্নত মানের পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে তাই না, এতে থাকবে প্রায় এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল বিভাগ।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com