সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

দেশসেরা নওগাঁর আমরুপালী আমকে ব্রান্ডিংসহ জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি

মোশারফ হোসেন জুয়েল নওগাঁ :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩

নওগাঁয় ধান ছিল চাষির ধ্যান ও জ্ঞান। এখন বরেন্দ্রর বুকে শুধু ধান নয়, আমও ফলে। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম চাষে উৎপাদনে এগিয়ে সীমান্তবর্তী এই জেলা। এই জেলায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হয় আম রুপালী। বর্ণে-গন্ধে খেতে সুস্বাদু-সুমিষ্টি ও গুনগতমান ভালো হওয়ায় দেশসেরা এখানকার আম রুপালী। বিদেশেও এই আম ব্যাপক সুনাম কুড়িয়ছে। তাই এই আমকে ব্রান্ডিং হিসেবে ঘোষনা দাবি চাষিদের। জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট সাপাহার। চাষিরা প্রতিদিন বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে ভ্যান, ভটভটি ও অটোরিকশায় করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে এই বাজারে। প্রতিদিন ভোর থেকেই শুরু হয় আম বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আম কিনতে আসেন এই বাজারে। বর্তমানে চলছে আম রুপালীর ভরা মৌসুম। এছাড়াও বারি-৪, ফজলি ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমরুপালী প্রকারভেদে ২৫০০-৪৫০০ টাকা, বারি-৪ জাতের আম ২৪০০-৩৫০০ টাকা, ফজলি ১৫০০-১৮০০ টাকা, আর্শ্বিনা ১২০০-১৫০০, ব্যানানা ম্যাংগো ৬০০০-৮০০০ হাজার টাকা মন হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানায়, আবহাওয়া ও মাটির কারনে অন্যান্য আমের থেকে এই আমের ফলনও হয় বেশি। সাধারনত আম এক বছর ফলন দেওয়ার পর পরের বছর আর ফলন দেয় না কিন্তু আম রুপালী প্রতি বছর ফলন দেয়। তাছাড়া এই গাছ খুব বেশি লম্বা হয় না। বরেন্দ্র এলাকার এঁটেল মাটির আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে চাহিদা থাকে। ভালো দামও পাওয়া যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে দেশে আমের জন্য সুখ্যাতি পেয়েছে এই জেলা। এবার জেলায় আমের ভালো ফলন হয়েছে। চলতি বছর জেলার ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি আম রুপালীর চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সাপাহার, পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলায়। এছাড়াও নাকফজলি, ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, খিরশাপাত, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাংগোসহ দেশি-বিদেশি ১৬টি জাতের আম চাষ করেছেন চাষিরা। সাপাহার উপজেলার আমচাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আম রুপালী আম খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়াও দাম ভালো পাওয়া যায়। এজন্যই চাষীদের মাঝে আম রুপালী চাষের আগ্রহ বেশি। বর্তমানে আম রুপালী আমের দাম ভালো আছে। এ আম উৎপাদন, বিক্রি, ক্রেতার চাহিদা আর স্বাদ সবদিক মিলিয়ে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করা যায় না। সাপাহার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, আমের নতুন বানিজ্যিক রাজধানী নওগাঁ। এখানে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় আম রুপালী। এই আম সারাদেশের মধ্যে গুণগতমান ভালো, অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। এত সুন্দর আম রুপালী কোথাও পাওয়া যাবে না এ জেলা ছাড়া। বিদেশেও এই আম ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। নওগাঁতে যে রকম গুণগতমান সম্পন্ন আম উৎপাদন করা হয় এটা শুধু নওগাঁতেই সম্ভব। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আম রুপালী আম কিনে নিয়ে গিয়ে নিজেদের জেলার আম হিসেবে বাজারজাত করে। এটা বন্ধ করা উচিত। নওগাঁর আম রুপালী আমকে ব্রান্ডিং ঘোষনা করতে হবে। তাহলে কেউ নওগাঁর আমকে অন্য জেলার আম হিসেবে বাজারজাত করতে পারবে না। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের ভৃমিকা রাখতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে আম কিনতে আসা শরিকুল ইসলাম বলেন, অনেক জায়গাতে আম রুপালী চাষ হলেও এখানকার আম খেতে খুবই সুস্বাদু। এজন্য রহনপুর থেকে এখানে এই আমটি কিনতে এসেছি। এখান থেকে আম কিনে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, নোয়াখালী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠাবো। এজন্য সাপাহারের আম রুপালী আমের চাহিদা বেশি। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আম কিনতে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, এ উপজেলার আম রুপালী অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। এ আমের সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ুর বিশেষত্বের কারনে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় নওগাঁর আম অনেক সুস্বাদু হয়। নওগাঁয় সবচেয়ে আম রুপালী, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাংগো বেশি চাষ হয়। সাপাহার ও পোরশা উপজেলার আম রুপালরী সাথে বাংলাদেশের কোন আম রুপালীর আমের তুলনা হয় না। এর স্বাদ ও গুণগত মানের দিক থেকে যে কোনো আমের চেয়ে ভালো হওয়ার কারণে কৃষকরা আম রুপালী আম চাষে বেশি ঝুঁকছেন। তাই এ জেলার আমরুপালী আম ব্র্যান্ডিং করাসহ জিআই পন্য হিসেবে ঘোষনা করার দাবি তাঁর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com