কাউকে কোনো কিছু দেয়া বা দান করা নিঃসন্দেহে বিশাল সওয়াবের কাজ। অর্থসম্পদ বা উপকারী কোনো কিছু দান করা ইসলামের বড় একটি ইবাদত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সা: আমাদেরকে বিভিন্নভাবে দানের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক আমরা কেবল তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অসহায়, নিঃস্ব, গরিব ও প্রকৃতার্থে দানের মুখাপেক্ষী এমন লোকদেরই দান করে থাকি। আমরা সবাই চাই, আমাদের দান যেন সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে এবং আল্লাহ তায়ালা যেন তা কবুল করে নেন। কিন্তু সমাজের মধ্যে ধোঁকাবাজি, প্রতারণা আর চৌর্যবৃত্তি বেড়ে যাওয়ায় দানগ্রহীতা সম্পর্কে আপত্তির শেষ থাকে না। আমরা নিজেরাও প্রায় সময়ই শঙ্কিত থাকি, আমাদের দান সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছেছে তো?
চলুন জেনে নিই দান করতে গিয়ে ধোঁকায় পড়ে যাওয়া বা ভুল মানুষকে দান করা সম্পর্কে হাদিসে কী বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, (পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু দান করব। রাতে সে দান নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, (অমুক) চোরকে দান করেছে। এতে সে বলল, হে আল্লøাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই আরেকটি দান করব। পরদিন রাতে সে দান নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, (অমুক) রাতে এক ব্যভিচারিণীকে দান করেছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, (আমার দান) ব্যভিচারিণীর হাতে পৌঁছল। আমি অবশ্যই আরেকটি দান করব। এরপর সে দান নিয়ে বের হয়ে কোনো এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিলো। সকালে লোকেরা বলতে লাগল, (অমুক) ধনী ব্যক্তিকে দান করেছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, (আমার দান) চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়ল। পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হলো, তোমার দান চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা থেকে বিরত থাকবে, তোমার দান ব্যভিচারিণী পেয়েছে, সম্ভবত সে তার ব্যভিচার থেকে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার দান পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে সদকা করবে। (বুখারি-১৪২১, মুসলিম : ৭৮-১০২২, নাসায়ি-২৫২৩)
অপর হাদিস বলা বলা হয়েছে, মা’ন ইবনে ইয়াজিদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি, আমার পিতা (ইয়াজিদ) ও আমার দাদা (আখনাস) রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে বাইয়াত করলাম। তিনি আমার বিয়ের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিয়ে সম্পন্ন করে দেন। আমি তাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচার প্রার্থী হই, একদা আমার পিতা ইয়াজিদ কিছু স্বর্ণমুদ্রা দান করার নিয়তে মসজিদে এক ব্যক্তির কাছে রেখে (তাকে তা বিতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যক্তির কাছ থেকে তা গ্রহণ করে পিতার কাছে এলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। বিষয়টি আল্লাহর রাসূল সা:-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বললেন, হে ইয়াজিদ! তুমি যে নিয়ত করেছ, তা তুমি পাবে আর হে মা’ন! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই। (বুখারি-১৪২২)
আমাদের মনে রাখা উচিত, ‘আমলের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি-১) সুতরাং দানগ্রহীতা যেমনই হোক না কেন আমরা যদি বিশুদ্ধ নিয়তে কেবল আল্লাহর জন্যই দান করি তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের তার উত্তম প্রতিদান দেবেন। আর যদি ভুলক্রমে কোনো ভুল মানুষের হাতে চলে যায় আমরা দোয়া করব আল্লাহ তায়ালা যেন এই দানের উছিলায় তাকে সংশোধন করে দেন(নয়াদিগন্ত অনলাইন)। লেখক : শিক্ষার্থী; আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।