রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

এসএসসি থেকে এইচএসসি: দুই বছরে ঝরে গেছে ৫ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

জেসমিন আক্তার জুঁই। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে পা রাখে। যথারীতি একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন করে। কিন্তু এরপর পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আটকে যায় পড়াশোনার চাকা। দুই বছরের ব্যবধানে তার সহপাঠীরা আগামী ১৭ আগস্ট থেকে এইচএসসি পরীক্ষার টেবিলে বসলেও তার বসা হচ্ছে না। শুধু জেসমিন নয়, তার মতো ৫ লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এসএসসি উত্তীর্ণ হয়ে আসন্ন পরীক্ষায় বসতে পারছে না। তার আগেই তারা ঝরে গেছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যমতে, চলতি বছর যারা এইচএসসি পরীক্ষায় বসবে তারা ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। ওই বছর ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছিল ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। তাদের মধ্যে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে নিবন্ধন করেছিল ১৭ লাখ ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৩ জন শিক্ষার্থী। একাদশ ও দ্বাদশ এই দুই শ্রেণির গ-ি পার হয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণের আগেই ঝরে গেল ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৪ জন শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশেরও বেশি। ঝরে পড়ার হার গত এক দশকের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সালে পাসের হার ছিল গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ, ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। করোনা পরবর্তী ব্যাচ হিসেবে ওই বছর এসএসসিতে শুধু তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়। নানা ছাড় দেওয়ায় রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। এই কারণে পাসের হার অন্যান্য বছর থেকে বেশি হওয়ায় ঝরে পড়ার হারও বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে গত কয়েক বছরের ঝরে পড়ার হার ১৮ থেকে ২২ শতাংশের ঘরে থাকলেও চলতি বছর সেটি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যেটাকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে। মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। বাকিরা অনিয়মিত ও এক, দুই এবং তিন বিষয়ের মানোন্নয়ন প্রার্থী। আর এবার যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী আছে তাদের সঙ্গে ২ বছর আগে (২০২১) একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করেছিল মোট ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৩ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ দুই বছরে শিক্ষার স্রোতধারা থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৪ জন শিক্ষার্থীই ঝরে পড়েছে; যা মোট শিক্ষার্থীর ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর ঝরে পড়াদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৯ জন; যা শতকরা হারে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর তপন কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার ঝরে পড়ার হারের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ এই ব্যাচটি করোনার পরবর্তী ব্যাচ। যারা তিন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ। ওই বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছিল। যারা স্বাভাবিক কারণে কলেজে ভর্তি হয়নি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক মুহাম্মদ রবিউল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর ঝরে পড়ার হার বেশি দেখাবে এটা স্বাভাবিক। তবে সবাই ঝরে পড়েছে এ কথাও সরাসরি বলা যাবে না। কারণ, এসএসসি পাসের পর এদের অনেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হয়। আবার কেউ কেউ বিদেশে পড়তে চলে যায়। এই দুই সংখ্যাটাও কম নয়। আবার তুলনামূলক কম শিক্ষিত পরিবারের মেয়েদের মধ্যে এসএসসির পর বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকে। সে কারণে এই স্তরে ঠিক কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে সেটার প্রকৃত পরিসংখ্যান নিরূপণ করা কঠিন। তবে, এটা বলা যায় মাধ্যমিক পাসের পর অনেকে কর্মজীবনে প্রবেশ করে থাকে। তবে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, দেশে করোনার ধাক্কায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেড়ে গেছে। তার প্রভাবে সব স্তরের শিক্ষায় প্রতি বছর ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঝরে পড়ার প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করা জরুরি। সেজন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালে এইচএসসিতে ৩ লাখ ৭৪ হাজার এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ১৮ হাজার এবং গত বছর ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৮ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। সংখ্যাগত দিক থেকে এবার ঝরে পড়ার হার সর্বোচ্চ। এবার যে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আগে ফেল করা শিক্ষার্থী অনিয়মিত হিসাবে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৩ জন। প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ১ হাজার ৫৪৪ জন, আর ফল উন্নয়ন পরীক্ষার্থী ১ হাজার ৭৮৬ জন।
বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংখ্যাগত হিসাবে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। ঝরে পড়ার হারও বেশি এই বোর্ডে। ২০২১ সালে এ বোর্ডে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৪৩ জন একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩ জন। ঝরে পড়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪০ জন। এভাবে রাজশাহী বোর্ডে ঝরে পড়েছে ৪৩ হাজার ৪২০ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৫০ হাজার ৮৪২ জন, যশোরে ৪২ হাজার ৯৯৮ জন, চট্টগ্রামে ৩৬ হাজার ৪৫ জন, বরিশালে ২১ হাজার ৯০৪ জন, সিলেটে ২৩ হাজার ৪৩৫ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৩৫ হাজার ২০১ জন, ময়মনসিংহে ২২ হাজার ৭৮৫ জন ঝরে পড়েছে। সাধারণ ৯টি বোর্ডে মোট নিবন্ধিত পরীক্ষার্থী হয়েছিল ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩৪ জন, আর ঝরে পড়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭০ জন। যা মোটের হিসাবে ২৮ দশমিক ০১ শতাংশ। এছাড়া মাদরাসা বোর্ডে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪২৯ জন নিবন্ধন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ৯১ হাজার ৭৭০ জন।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রমা বিজয় সরকারও বলছেন, সিলেট বোর্ডে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে। অনেকে ভর্তি বাতিল করে কাজে ঢুকে পড়েছে। এদের মধ্যে মেয়েদের অনেকেই বিয়ের পীড়িতে বসেছে, পরিবারের অর্থ সংকটে পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব বাস্তবতা নিয়েই আমাদের দেশের শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।
শিক্ষা বোর্ডগুলো জানিয়েছে, তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে কারিগরি বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে। এবার এই শাখায় ২ লাখ ২০ হাজার ৮৪০ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭১৫ জন। ছিটকে পড়েছে ৭৬ হাজার ১২৫ জন, যা ৩৩ শতাংশ। এরপরই স্থান বিশেষায়িত শিক্ষা মাদরাসার। দাখিলে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪২৯ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৭০ জন। বাদ যাচ্ছে ৬০ হাজার ৬৫৯ জন।-ঢাকা পোস্ট.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com