অবশেষে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের ২০/৩০ বাড়ির মালিকানা পেয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। সম্প্রতি ১ হাজার ১ টাকা মূল্য ধার্য করে সরকার ৫ কাঠা জমিসহ তিনতলা ওই বাড়ির সাফকবলা দলিল করে দিয়েছে তার নামে। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে বাড়িটি তার দখলেই ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে এই বাড়িটি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন কাদের সিদ্দিকী। বাড়িটি তার দখলে থাকলেও কোনো কাগজপত্র ছিল না। সাফকবলা দলিল করে দেওয়ায় এখন থেকে বাড়িটির বৈধ মালিক হলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব নাগরিক তাদের বাড়ি বা সম্পত্তি ফেলে চলে গেছেন, স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে সেসব সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। পরে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মাধ্যমে এসব সম্পত্তি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কদের সিদ্দিকী বাড়িটি পেতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। সেখান থেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মাধ্যমে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। সরকারি সিদ্ধান্তে নামমাত্র মূল্যে তাকে বাড়িটির দলিল করে দেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, বাড়িটি পেতে এর আগেও একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী। ১৯৭৩ সালে বাড়িটির জন্য প্রথম আবেদন করেছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন সরকারের কাছে আবেদন করেন তিনি। নানা কারণে ওই সময় বাড়িটির কাগজপত্র না হলেও এবার তিনি বাড়িটির বৈধ মালিকানা পেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের ২০/৩০ বাড়িটি ১ হাজার ১ টাকা মূল্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নামে সাফকবলা দলিল করে দেওয়া হয়েছে। তিনি টাকাও জমা দিয়েছেন। এখন থেকে বাড়িটি তার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবিরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু কাদের সিদ্দিকীকে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এমন চার-পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি সিদ্ধান্তে আমরা বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছি। আইনের সব বিধিবিধান মেনে মোহাম্মদপুরের বাড়িটি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নামমাত্র মূল্যে দলিল করে দেওয়া হয়েছে।’
দলিল করে দেওয়ার আগে গত ৫ জুলাই পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সাগুফতা হকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে কাদের সিদ্দিকীর নামে বরাদ্দের কথা জানানো হয়। ওই চিঠিতে বেশকিছু শর্তের কথা বলা হয়। শর্তগুলো হচ্ছেÑ গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক ধার্যকৃত হারে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তবে শহীদ পরিবার বা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রপ্রাপ্ত হলে ধার্যকৃত ভাড়ার পরিমাণ অর্ধেক হবে। ধার্যকৃত ভাড়া গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক ট্রেজারি চালান পাস করে নির্ধারিত কোড নম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিতভাবে পরিশোধ করতে হবে। কনজারভেন্সি, পানির বিল, পৌরকর, তিতাস গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি যথাযথভাবে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকেই পরিশোধ করতে হবে।
সরকারের পূর্ব অনুমতি ছাড়া বাড়িটির কোনো প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা মেরামত করা যাবে না। বাড়ির কোনো কিছু ক্ষতি বা বিনষ্ট হলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর ধার্যকৃত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হবে। বাড়িটি কোনো অবস্থাতেই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। তা করলে বরাদ্দপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি নিজে না থেকে অথবা আংশিকভাবে থেকে যদি অন্য কাউকে ভাড়া দিয়ে থাকেন, তবে তার বরাদ্দপত্র তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করে সাত দিনের মধ্যে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে।
সরকার যদি জনস্বার্থে নিজ দরকার বলে মনে করে বা এটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে অবমুক্ত করে দেয়, তবে যথারীতি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাড়িটি খালি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার বরাদ্দ দেওয়া বাড়িটির পরিবর্তে অন্য কোনো বাড়ি বরাদ্দ দিতে বাধ্য থাকবে না। এসব শর্তাবলিসহ বাড়ি বরাদ্দের বিষয়টি জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কাদের সিদ্দিকী।