পাথরে পারদ জ্বলে, জ্বলে ভাঙে ঢেউ
ভাঙতে ভাঙতে জানি গড়ে যাবে কেউ।
-মোশাররফ হোসেন খান
বাংলাদেশে কবিতা চর্চায় অন্যতম একটি নাম মোশাররফ হোসেন খান। বাংলা কবিতার ঐতিহ্যবাদী ধারার অন্যতম কবি তিনি। তাঁর কাব্য আবির্ভাব আশির দশকে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদয় দিয়ে আগুন’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো লিখে যাচ্ছে তিনি। তার সর্বশেষ কবিতা গ্রন্থ ‘শিখর শিলালিপি’। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ হলো : ‘নেচে ওঠা সমুদ্র’, ‘আরাধ্য অরণ্যে’, ‘বিরল বাতাসের টানে’, ‘পাথরে পারদ জ্বলে’, ‘ক্রীতদাসের চোখ’, ‘নতুনের কবিতা’, ‘বৃষ্টি ছুঁয়েছে মনের মৃত্তিকা’, ‘দাহন বেলায়’, ‘সবুজ পৃথিবীর কম্পন’, ‘পিতার পাঠশালা’, ‘স্বপ্নের সানুদেশ’, ‘কুহক ও কুহকী’, ‘বুক পেতেছি অগ্নিপাতে’।
মোশাররফ হোসেন খান শুধু কবিতা চর্চার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। পাশাপাশি সৃজন করেছেন অসামান্য সব ছোটগল্প। এই ছোটগল্পগুলোতে স্থান পেয়েছে অবহমান বাংলার পারিবারিক-সামাজিক চিত্র। তিনি যে সময় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন, সেই সময়ের অনেকের কথাসাহিত্য যৌনতা আক্রান্ত। কিন্তু মোশাররফ হোসেন খান ওই বিদঘুটে বিভৎস্য পথে হাঁটেননি। তিনি তাঁর দেখা সমাজের ছবি আঁকতে চেয়েছেন। যেই সমাজে ক্লেদজ কুসুম নয়; বরং ফুটে সুবাসিত পুষ্প।
ছোটগল্পের পাশাপাশি সৃজন করেছেন অসংখ্য কিশোর কবিতা। আর এই সব কিশোর কবিতার প্রধান অনুসঙ্গ হলো স্বপ্নাতুর সমাজ। যেই সমাজ বিনির্মাণ করতে এই কিশোরদের তৈরি হতে। তাদের মধ্যে সুন্দর সমাজ নির্মাণের স্বপ্নবীজ বপন করেন তিনি। ভাঙনমুখী সমাজে গড়ার প্রত্যয়ী কবি খান। কবি খানের অন্যতম আরেক সৃষ্টি হলো সাহসী মানুষের গল্প। যা লক্ষ লক্ষ তরুণের মনে হেরার রাজ তোরণের আলোর ঝ¦লকানি হয়ে আছে, থাকবে। তার এই ধরনের গল্প পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে একটা মুসলিম সমাজে কেন তিনি এগুলো লিখছেন। পরেই মনে হয়েছে যে সমাজে শরীয়তুল্লাহ বা মুন্সি মেহেরুল্লাহর চেয়ে ঈশ^রচন্দ্র এবং রামমোহন নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। সেই সমাজ কতটা পিছিয়ে পড়া। আর একটি পিছিয়ে পড়া সমাজকে আলো দেখাবেন আলোকপ্রাপ্তরা এটাই স্বাভাবিক। কালের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত সমাজের সবচেয়ে আলোকিত মানুষগুলো নিয়ে মোশাররফ হোসেন খান তার সাহসী মানুষের গল্পগুলো সৃজন করেছেন। গল্পগুলো সৃজন করতে তা অসম্ভব পরিশ্রমের মুখোমুখী হতে হয়েছে এটা অনুমান করা যায়। কারণ ইতিহাস নিয়ে সাহিত্য চর্চায় কল্পনার সুযোগ থাকে। কিন্তু নবী-রাসূলদের জীবন নিয়ে গল্পে সৃজনে এই সুযোগ একেবারেই নেই। ফলে ইতিহাসের সত্যকে ধারণ করে এই গল্পগুলোকে গল্প করে তোলার অসামান্য চেষ্টা তাকে করতে হয়েছে।
সৃষ্টিশীল কাজের পাশাপাশি তিনি করেছেন সম্পাদনার কাজও। ‘কলম’র মতো খ্যাতনামা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। বর্তমানে সম্পাদনা করেন ‘কিশোরকণ্ঠ’র মতো জনপ্রিয় শিশু-কিশোর পত্রিকা। যে পত্রিকাটি শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিকাশে কাজ করছে প্রায় চার দশক ধরে। এর পাশাপাশি প্রায় দুই ডজন সিরাতুনব্বী সংখ্যা সম্পাদনা করেছেন তিনি। এখনো সৃজনশীলতায় নিজেকে রেখেছেন সম্পৃক্ত। ২৪ আগস্ট কবি মোশাররফ হোসেন খান ৬৬তম বর্ষে পদার্পন করবেন। কবি জানায় জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা। লেখক: কবি শাহাদাৎ সরকার।