বিন্দু বিন্দু জলে সাগর আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণায় গড়ে ওঠে মরুভূমি। তেমনি ছোট ছোট গুনাহ ভয়ঙ্কর গুনাহের পথ উন্মুক্ত করে। ছোট ছোট গুনাহকে গুনাহ মনে না করা আরো ভয়ঙ্কর গুনাহ। গুনাহ ছোট হোক বড় হোক, তা গুনাহ-ই। আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, হে আয়েশা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কেননা সেগুলোর জন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
মানুষ সাধারণত ছোট ছোট গুনাহের ব্যাপারে একটু উদাসীন হয় এবং তা ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। একসময় সে কবিরা গুনাহে জড়িয়ে পড়ে এবং এটা তার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। হাদিসে উল্লিখিত ‘মুহাক্কারাত’ তথা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুনাহ শব্দের ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারাদরা বলেছেন- এমন পাপ, যার প্রতি মানুষ ভ্রƒক্ষেপ করে না। ইমাম মুনাভি রহ: বলেন, মুহাক্কারাত হলো, ছোট ছোট পাপ। মহানবী সা: তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কারণ তা বড় পাপের পথে মানুষকে পরিচালিত করে। (ফয়জুল কাদির)
ছগিরা বা ছোট গুনাহের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, যে অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে, সে তা দেখতে পাবে এবং যে অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে-ও তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলজাল ৭-৮) তাই মু’মিন ছোট-বড় সবধরনের গুনাহকে ভয় পায় এবং তা থেকে সতর্ক থাকার চেষ্টা করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, নিশ্চয় মু’মিন তার গুনাহকে এমনভাবে দেখে, যেন সে এমন পাহাড়ের নিচে বসে আছে, যা তার উপর ধসে পড়বে। নিশ্চয় গুনাহগার তার গুনাহকে এমনভাবে দেখে, যেন একটি মাছি তার নাকের উপর দিয়ে উড়ে গেল (বুখারি)। সাহাবিরা কোনো গুনাহকেই ছোট মনে করতেন না। আনাস রা: থেকেত বর্ণিত, তোমরা এমন সব কাজ করে থাকো যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও চিকন। কিন্তু নবী সা:-এর সময়ে আমরা এগুলো ধ্বংসকারী মনে করতাম (বুখারি)।
ছোট গুনাহকে বলা হয় শয়তানের হাতিয়ার। ছোট গুনাহের মাধ্যমে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং বড় গুনাহের দিকে ধাবিত করে। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, শয়তান পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদাতের ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেছে; কিন্তু সে ছোট গুনাহের ব্যাপারে তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট। (কানজুল উম্মাল হাদিস) হাদিস বিশারদরা বলেন, ছোট গুনাহের ব্যাপারে শয়তান সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ হলো- মানুষ ছোট গুনাহের প্রতি উদাসীন এবং এ বিষয়ে তারা বেপরোয়া হয়ে থাকে। গুনাহ যত ছোট হোক না কেন তা প্রকারান্তরে আল্লাহরই অবাধ্যতা। গুনাহ যত ছোটই হোক না কেন, তার জন্য পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘এবং উপস্থিত করা হবে আমলনামা এবং তাতে যা লেখা থাকবে তার কারণে আপনি অপরাধীদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তে দেখবেন। তারা বলবে, হায় দুর্ভাগ্য! এটি কেমন কিতাব যাতে ছোট-বড় কোনো কিছুই বাদ যায়নি; বরং সবকিছুর হিসাব তাতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্ম উপস্থিত পাবে এবং আপনার প্রতিপালক কারো প্রতি অবিচার করবেন না।’ (সূরা আহকাফ-৪৯) ছোট ছোট গুনাহ ও অপরাধ মানুষের ভেতরকার ভালো বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি ক্রমেই নষ্ট করে ফেলে, মানুষকে ঈমান ও ইসলামশূন্য করে ফেলে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা ছোট গুনাহের দৃষ্টান্ত হলো- কোনো সম্প্রদায় উপত্যকার পাদদেশে উপনীত হলো। অতঃপর ছোট ছোট জ্বালানি একত্র করে রুটি তৈরি করে। নিশ্চয়ই ছোট ছোট গুনাহ যখন কাউকে পেয়ে বসে, তখন তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়ে। (মুসনাদে আহমাদ) ছোট গুনাহের প্রতি সতর্ক না হলে তা ধীরে ধীরে আল্লাহর অবাধ্যতা ও সীমা লঙ্ঘনের দ্বারে পৌঁছে দেয়। ফলে অন্তরে ক্ষত ও অন্ধকার সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং ধরিয়েছে। (সূরা মুতাফফিফিন-১৪)। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে প্রথমে ছোট- বড় সবধরনের গুনাহকে গুনাহ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, একনিষ্ঠ তাওবাহ করা এবং গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে রবের কাছে ফরিয়াদ করা। লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়