এবনে গোলাম সামাদ গবেষণা কেন্দ্রের স্মারক বক্তৃতা
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ এবনে গোলাম সামাদ স্মারক বক্তৃতায় দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেন, এবনে গোলাম সামাদ ছিলেন বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সন্ধানকারী জ্ঞানতাপস। বাঙালি মুসলমানের মন, মনন ও ইতিহাসের যে বয়ান আহমদ ছফা, বদরুদ্দীন উমর, ড. আনিসুজ্জামান দিয়েছেন তার প্রতিবয়ানে এবনে গোলাম সামাদ দেখিয়েছেন বাংলার মুসলমানদের এই অঞ্চলে বসবাসের হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসের ধারাবাহিকতার। তিনি বাংলার মুসলমানদের শিকড় সন্ধান করে প্রমাণ করেছেন এই অঞ্চলের মুসলমানরা আদি অধিবাসী। জাতির অবিভাবক তুল্য ব্যক্তিত্ব, দেশের অন্যতম বুদ্ধিজীবী, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, প্রফেসর ড. এবনে গোলাম সামাদের বিচিত্র জ্ঞানের সমাহার ঘটেছিল। এদেশের জ্ঞান চর্চাকে ও বাংলার মুসলমানদের আত্মপরিচয় গবেষণাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন তিনি। জাতীয় সংকটকালে অকপটে সত্য বলে তিনি অবিভাবকের মতো ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। জাতির বর্তমান সংকটকালে তার মতো একজন দেশপ্রেমিক, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্বের বড়ই প্রয়োজন ছিল। তার অবদানকে জাতি কৃতজ্ঞভরে স্মরণ করবে বলে জানান বক্তারা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এবনে গোলাম সামাদ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মারক বক্তৃতায় তারা এইসব কথা বলেন। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নাজিব ওয়াদুদের সভাপতিত্বে ও তরুণ কবি ও গবেষক শাহাদাৎ সরকারের সঞ্চালনায় স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, নৃবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। স্মারক বক্তৃতা রাখেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও লেখক ফাহমিদ-উর-রহমান। আরো বক্তব্য রাখেন, কবি, সাংবাদিক ও অধ্যাপক আবদুল হাই শিকদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট আমীর হামযা, কবি ও গবেষক মুহাম্মদ আবদুল বাতেন, কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন প্রমুখ। স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন, কথাসাহিত্যিক দেওয়ান মোহাম্মাদ শামসুজ্জামান, লেখক এমদাদুল হক চৌধুরী, পাঠক সম্রাট শেখ নজরুল, কবি আফসার নিজাম, সাংবাদিক আবদুর রউফ, কবি তৌহিদ আকবর, ওয়াহিদুজ্জামান, ইউনুস ফারাবি, মোশাররফ মুন্না, ইয়াসিন মাহমুদ, শাহরিয়ার বায়েজিদ, সীমান্ত আকরাম প্রমুখ।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, এবনে গোলাম সামাদ বিরল প্রতিভার অনন্য লেখক ও কলামিস্ট ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। বিজ্ঞান তিনি শিখেছেন ও শিখিয়েছেন পদ্ধতিগতভাবে। তার একটি বৈজ্ঞানিক মানস ও স্বকীয় চিন্তারীতি গড়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তার সমৃদ্ধ ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাও ছিল। তিনি বলেন, এবনে গোলাম সামাদ ছিলেন একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে জাতির জন্য অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হয়েও তিনি সাহিত্য, শিল্প, রাজনীতি, ও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়ে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন এবং জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। তার ক্ষুরধার লেখনী দেশপ্রেমিক তরুণ ও যুবসমাজকে আলোড়িত এবং দেশ গড়ার কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আজীবন সত্য প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে গেছেন। মহান রব তার শূন্যতা পূরণ করে দিন।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নাজিব ওয়াদুদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘আত্মপরিচয়ের সন্ধানে’ নামক গ্রন্থে এবনে গোলাম সামাদ বাংলার মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বনামধন্য এই পণ্ডিত ব্যক্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী হলেও সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞানগর্ভ পাণ্ডিত্য সর্বজনবিদিত। জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায় তার বিচরণ ছিল। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত ও পরবর্তী সময়ে সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশমাতৃকার সঙ্কটকালে প্রথিতযশা এই পণ্ডিতের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।