গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের চরগেবরা গ্রামের মোঃ আয়ুব আলী শেখ বিদেশী সাম্মামফল চাষ করে বাজিমাত করেছেন।
সাম্মাম বিদেশী ফল। রসালো খেতে সুস্বাদু। কম মিষ্টির এ ফল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। সব বসয়সী মানুষের জন্য সাম্মাম উপযোগী। তাই বিশ্বের সর্বত্র এ ফলের কদর রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি সাম্মাম ১২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উচ্চমূল্যের এ ফল চাষ করে বাজিমাত করেছেন গোবরা ইউনিয়নের চরগোবরা গ্রামের মোঃ আয়ুব আলী শেখ (৫৫)।
কৃষক মোঃ আয়ুব শেখ মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে জুন মাসের শুরুতে সাম্মাম চাষ করেন। এখন তিনি ক্ষেত থেকে সাম্মাম সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন। চলতি মাসের মধ্যেই তার ক্ষেতের সব সাম্মাম বিক্রি শেষ হবে। মাত্র ৭৫ দিনেই তিনি সাম্মাম বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা আয় করবেন বলে জানাগেছে। এতিমেধ্যে ওই কৃষক ক্ষেত থেকে ১ লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি করেছেন। আরো ২ লাখ টাকার সাম্মাম তিনি বিক্রি করতে পারবেন বলে বাসস জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জে সাম্মামের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের দ্বার সূচনা করেছেন অনুকরণীয় কৃষক মোঃ আয়ুব আলী শেখ। তাই সাম্মাম চাষে আগ্রহীরা প্রতিদিন তার ক্ষেত পরিদর্শন করছেন । অনেকেই আগামীতে লাভ জনক সাম্মাম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মোঃ আয়ুব আলী শেখের সাম্মাম ক্ষেতে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, গাছে গাছে সাম্মাম ঝুলছে। রক স্টার ও এ্যারোমা সুইট প্রজাতির সাম্মাম ব্যাগিং করে রাখা হয়েছে। আর গোল্ডেন হানি ডিউ জাতের সাম্মাম খোলামেলাভাবে বেড়ে উঠেছে। এ জাতের হলুদ আভা পুরো ক্ষেতে নয়নাভিরাম শোভা ছড়াচ্ছে। এখানে গাছের থেকে সাম্মামেরই বেশি দেখা মিলেছে। তাই দর্শনার্থীরা কৃষক মো: আয়ুব আলী শেখের সাম্মাম ক্ষেত দেখ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন সাম্মাম চাষে । এটি দেখে অনেক তরুণ ও সাম্মাম চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কৃষক মোঃ আয়ুব আলী শেখ বলেন, আমি সিঙ্গপুরে চাকরি করতাম। চাকরি ভালো লাগত না। পরে দেশে ফিরে এসে ইউটিউবে সাম্মাম চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। তারপর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তারের সহযোগিতা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মালচিং ফিলিং পদ্ধতিতে সাম্মাম চাষ করি। এ পদ্ধতিতে মাটি রস ও গাছের খাদ্য ধরে রাখতে পারে। তাই সারের অপচয় হয় না। এছাড়া সাম্মাম চাষে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেছি। এখানে হলুদ ফ্রেমন ট্রাফ স্থাপন করা হয়েছে। তাই কীটনাশক তেমন প্রয়োগ করতে হয়নি। গত জুনে মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে সাম্মাম চাষাবাদ করি। ৬০ দিনের মাথায় সাম্মাম সংগ্রহ করে বাজারজাত শুরু করেছি। প্রতিটি সাম্মামের ওজন ২ কেজি থেকে সোয়া ৪ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। সাম্মাম চাষে আমার ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি সাম্মাম ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। চলতি মাসের মধ্যেই ৩ লাখ টাকার সাম্মাম বাজারে বিক্রি করতে পারব। এখান থেকে আমি মাত্র ৭৫ দিনেই আড়াই লাখ টাকা লাভ করতে পারব। প্রতিদিন সাম্মাম চাষে আগ্রহীরা আমার বাগান পরিদর্শনে আসছেন। শিক্ষিত বেকার যুবকরা লাভজনক সাম্মাম চাষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।
দর্শনার্থী পাশ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার গাড়ফা গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি ৪ বছর ধরে আমার কৃষি ফার্মে সাম্মামের চাষ করছি। সাম্মাম চাষ লাভ জনক। এটি বাংলাদেশের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। আমি মোঃ আয়ুব আলী শেখের বাগান পরিদর্শন করেছি। এখানে বেশ বড় সাইজের সাম্মাম ধরেছে। তার ক্ষেতের সাম্মাম আমাদের চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। এখানে এসে পেয়েছি মনের প্রশান্তি। এটি সাম্মাম চাষিদের জন্য সুখবর। সাম্মাম চাষে ব্যহৃত মালচিং পেপারের ১টি রোল ৭ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। ভারতে এ রোলের দাম মাত্র ২ হাজার রুপি। তাই বাংলাদেশে মালচিং পেপার উৎপাদন শুরু করতে হবে। এছাড়া ডিপ ইরিশেন, ক্রপকভার ও প্রয়োজনীয় ফার্টিলাইজার ব্যাবহার প্রয়োগে সাম্মাম চাষাবাদ করলে উৎপাদন খরচ আরো কমে আসবে। ফলের মিষ্টতা, স্বাদ বাড়বে। গুনগতমান ১৪ থেকে ১৫ ব্রিক্স আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড হবে। এ ফল বিদেশে রফতানী করা যবে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সাম্মামের উৎপাদন বাড়বে। দেশের ভোক্তা কম দামে সাম্মাম খেতে পারবেন। বেশি উৎপাদন পেয়ে কৃষক লাভভান হবেন। তাই সম্ভাবনাময় সাম্মাম চাষে সরকারকে ইকুইপমেন্ট সহায়তা দিতে হবে। শীত আশার আগে ও শীত চলে যাওয়ার পরের সময়টাই বাংলাদেশর জন্য সাম্মাম চাষের উপযোগী বলে জানান এ তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। রমজান মাসে সাম্মামের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজ কুমার রায় বলেন, মোঃ আয়ুব আলী শেখ ৪০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে রকস্টার ও এ্যারোমা সুইট জাতের ২ হাজার সাম্মামের চারা এবং গোল্ডেন হানিডিউ জাতের ৫ শ’ সাম্মাম চারা রোপণ করেন। প্রতিটি গাছ থেকে তিনি ২ কেজি থেকে সোয়া ৪ কেজি সাইজের সাম্মাম ফলন পেয়েছেন । এখান থেকে তিনি কমপক্ষে ৩ টন সাম্মামের ফলন পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, আমরা আয়ুব আলীকে সব ধরণের সহযোগিতা করেছি। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী ও রাজ কুমার রায় তাকে পরামর্শ দিয়েছে। তিনি মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে সাম্মাম চাষ করে স্বল্প সময়ের সমধ্যে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার সাম্মাম চাষ দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এভাবেই আমরা কৃষককে দিয়ে উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদের মাধ্যমে কৃষকের আয় দ্বিগুন করে দিতে চাই। খোরপোষর কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত করে দিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সব বসয়সী মানুষের জন্য সাম্মাম উপযোগী। তাই বিশ্বের সর্বত্র এ ফলের কদর রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষককে সুবিধা দিয়ে এ ফলের আবাদ বাড়াতে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে সুপারিশ করব।