রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন

সত্য সুন্দরের পিয়াসী কবি আর. কে. শাব্বীর আহমদের চেতনারদুয়ার

সোহেল আহমেদ
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চেতনার দুয়ার কবি আর. কে. শাব্বীর আহমদের ২য় কবিতাগ্রন্থ। এটি প্রকাশিত হয় অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ সালে। প্রকাশক : সরলরেখা প্রকাশনী সংস্থা।
৯৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থটিতে ৭১ টি কবিতা সন্নিবেশিত হয়েছে।
গ্রন্থটিতে কবি সমকালীন স্বদেশকেন্দ্রিক নাগরিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি গ্রামীণ নৈসর্গিক পরিবেশ ও আটপৌরে জীবনের নিখুঁত ছবি এঁকেছেন। মুক্তক গদ্যছন্দ, স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতাগুলো সাজিয়েছেন। তাঁর লেখায় সদা সত্য সুন্দর ও মানবিক প্রেমের দর্শন লক্ষ্য করা যায়। পার্থিব জীবনের মোহ, মায়া ও ভ্রান্তির বেড়াজাল ভেদ করে তিনি অনন্তকালে সুখের ঠিকানা গড়ার স্বপ্ন এঁকেছেন তাঁর কাব্যচিন্তায়। গ্রন্থের নাম কবিতা চেতনার দুয়ার এ তিনি লিখেছেন, জীবনের কতগুলো বসন্ত / পার হয়ে গেছে / ম্লান হয়ে গেছে কতে শতো কাক ডাকা ভোর / সব পাখি নীড়ে ফেরে / সব নদী ফিরে যায় মোহনায় / তবুও কী মন আমার / ভ্রান্তির বেড়াজাল ভেদ করে / ফিরে আসতে চায় না/ অনাদি অনন্তকালের জীবন পথে।
বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত মানবতার কান্নায় কবির হৃদয় সিক্ত হয়েছে। মানবতা ও মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশায় কবির উচ্চারণ, আমি প্রতিনিয়ত / মানবতার কান্না শুনি / হৃদয়ে জ্বলে ওঠে আগুন / যেমনি ঘর্ষণে ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে দেশলাই / সিরিয়া ফিলিস্তিন কাশ্মীর বার্মায় / আর্তনাদ ওঠে বনি আদমের / নিজ বাসভূমে বেঁচে থাকার আকুলতায় / যেমনি মায়ের বুকে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে সন্তানেরা। (মানবতার কান্না) বহমান সময় কবিতায় নিপীড়িত মানবতার জন্য কবির নিরাপদ ভূখণ্ডের আকুতি শুনি, লাখো-কোটি নিপীড়িত মানবতার / চীৎকার ধ্বনিত হয় পৃথিবীর অধিপতির কাছে / সাহায্যকারী বন্ধুর আগমন প্রত্যাশার / নিরাপদ ভূখণ্ডের / সোনালি সূর্যোদয়ের।
নিরাপদ ভূখণ্ডে নবপ্রজন্মের হাসির মতো মুগ্ধতা চেয়েছেন কবি- নীলাকাশে রংধনুর মতো / মুগ্ধতা চাই / মুগ্ধতা চাই বিশুদ্ধ মানুষের / স্বচ্ছ সাদা মনের / যেমন হেমন্তের মেঘমুক্ত আকাশ / নিরাপদ ভূখণ্ডে নব প্রজন্মের হাসির / মুগ্ধতা চাই। (মুগ্ধতা চাই)
নারীদের সম্পর্কে কবির এক শুদ্ধতম দর্শন প্রকাশ পেয়েছে নারী কবিতায়। নরীরা শুধু ভোগের বা পণ্য সামগ্রীর উপকরণ নয়। কবি তাদেরকে আদুরে কন্যা, বীরের জায়া, নবী,মনীষীর জননী, সাহসী বীরাঙ্গনা অভিধায় অভিষিক্ত করে মানবিক মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তুমি গৃহীর আদুরে কন্যা / বিজয়ী বীরের জায়া / প্রত্যয়ী সন্তানের জননী / তোমার গর্ভে ধারণ করেছো / কতো নবী কতো মহামানব কতো মনীষী। (নারী)
নাগরিক জীবনের যন্ত্রণাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য শেকড় সন্ধানী কবি মায়াবী প্রকৃতির গ্রামীণ জীবনের সারল্য ও অকৃত্রিম সুখের ছবি এঁকেছেন এভাবে, ঘুম ঘুম তন্দ্রালুতায় জেগে ওঠি / শরৎ প্রভাতে / শারদীয় বৃষ্টিকণায় মুছে নেই / নয়ন যুগল / সাদা-শুভ্র মেঘের ভেলায় / মন ভাসাই। ( শারদ নয়ন )। হেমন্ত আসে / সোনালি ধানের মৌ মৌ গন্ধে / সোনালি ধানের মৌ মৌ গন্ধে / নবান্নে হেসে ওঠে কৃষক / গোলাভরা ধানে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে / গৃহস্থ বধূরা। ( হেমন্তিকা )
সৌরভময় ফুলের নিঃস্বার্থ অমায়িক প্রেমের মতো মানবিক ও ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তুলতে চান কবি।
ফুলের ভালোবাসা কবিতায় তাঁর উচ্চারণ : ফুলের ভালোবাসা / কী অমায়িক অমলিন / কী শুচিতা দেখি / ফুলের অঙ্গাবরণে / শিশিরস্নাত পরাগরেণু / নববধূর এলায়িত / কস্তুরি-কুসুম চুলের মতো / সুবাস ছড়ায় পরম মমতায় / ফুলের চোখে চোখ রেখে / নয়ন-যুগল স্নিগ্ধ করি / অবারিত প্রেম শিখি / ফুলিয়ে পেলব শরীর ছুঁয়ে / সার্থক হয় জনম জীবন / ফুলের মতো মানবিক প্রেমে।
শিশুতোষ ছড়ায় কবির পারঙ্গমতা লক্ষ্য করি। সংখ্যার ছড়া কবিতায় শিশুদের সুন্দর ও আদর্শিক অনুভূতি জাগ্রত করেছেন এভাবে : এক দুই তিন / মাগো আমার সালামটুকু নিন / চার পাঁচ ছয় / ন্যায়-নীতির পথে পথে পথে / হবে সবার জয়। ফুলের মতো সুবাস ছড়িয়ে ন্যায়-নীতির সমাজ গড়ে একটি নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন কবি : ফুলের মতো সুবাস তুমি ছড়াও / সত্য-ন্যায়ের সমাজ গড়ে বিশ্বটাকে নড়াও। (বিশ্বটাকে নড়াও)।
চেতনার দুয়ার গ্রন্থের কবিতাগুলোর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, প্রায় প্রতিটি কবিতায় কবি তাঁর কাব্যিক চেতনায় অসীম সত্তার অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বকে প্রতীকায়িত করছেন। যেমন- হৃদয়ের সংবেদনশীলতায় / ন্যুব্জ হয় / আমার ভালোবাসার সারথীরা / অপরূপ স্রষ্টার সমীপে। (ফুলের ভালোবাসা) কী অপরূপতায়সাজালো পৃথিবী / অসীম যিনি মহাদয়াবান। (চন্দ্রালুতা) অসীমের ভালোবাসা ঝরে পড়ুক / আকাশ-কোলের সৃষ্টিকুলে। (নিঃসীম নীলাকাশ) আনত হৃদয়ে অবনত হয় আমার সত্তা / সর্বশক্তিমানের অপার মহিমায়। (বোধি) কাব্যের শেষ দিকে কবির মৃত্যুচেতনা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর সুকৃতি মহানের দরবারে কবুল হয়েছে কিনা, তেমন বিচলিত ভাবনায় কবির আকুতি : আমার সুকৃতি মহানের সমীপে / গৃহীত কি-না সে ভাবনা আমায় / কেবলি বিচলিত করে।
দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে সত্য-সুন্দরের কাব্যটি বাঙলা কাব্যসাহিত্যে একটি সৃজনশীল সংযোজন হিসেবে বিপুল পাঠকনন্দিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com