জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে উপস্থিত হয়েছেছিলেন ১৯টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রতিনিধি-সহ বিশিষ্টজনেরা। তাদের বেশ ভালো আপ্যায়ন করেছে আয়োজক দেশ ভারত। শনিবার রাতে বিদেশী অতিথিদের নৈশভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বিদেশী নেতা এবং প্রতিনিধিদের কী কী পদে আপ্যায়ন করেছেন তিনি? জি২০ সম্মেলন বসেছে নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে। সেখানেই শনিবার আয়োজন করা হয় নৈশভোজের। তালিকার শুরুতেই লেখা ছিল, বৈচিত্র সত্ত্বেও কিভাবে ‘স্বাদ’-এর মাধ্যমে গোটা ভারত এক হয়েছে।
খাদ্যতালিকায় শুরুতে লেখা ছিল, ‘রীতি, প্রথা, জলবায়ু, বিভিন্ন বিষয়ে ভারতে প্রচুর বৈচিত্র রয়েছে। স্বাদই আমাদের সংযোগ ঘটিয়েছে।’ আরো জানানো হয়েছে, শরৎ ঋতুর উদ্?যাপন চলছে। খাদ্যতালিকাতেও রয়েছে তার প্রভাব। সারা ভারতজুড়ে নানা ধরনের যে খাবার পাওয়া যায়, তা-ই স্থান পেয়েছে খাদ্যতালিকায়। এসব ভারতের রন্ধন ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। শনিবার বিদেশী অতিথিদের পরিবেশন করা বেশির ভাগ খাবার তৈরি হয়েছে বাজরা দিয়ে। খাদ্যতালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে বাজরা (মিলেট)-এর। বাজরার খাদ্যগুণেরও উল্লেখ রয়েছে। শুরুতে ছিল ‘পত্রম’। ফক্সটেল মিলেট (হিন্দিতে বলে কাকুম)-এর পাতা মুড়মুড়ে করে ভেজে দই আর চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয় এই পদ। মেন কোর্সে ছিল ‘বনবর্ণম’ (মাটির শক্তি)। কাঁঠালের গ্যালেট (ময়দা দিয়ে তৈরি এক ধরনের ফরাসি কেক), তার সাথে মাশরুম, বাজরার পাঁপড়, কারিপাতা দিয়ে কেরলের লাল ভাত। মেন কোর্সে সাথে ছিল নানা রকম রুটি। যেমন মুম্বাই পাও (কালো জিরে দেয়া নরম পাউরুটি), বাখরখানি (এলাচ দেয়া মিষ্টি চ্যাপ্টা রুটি)। শেষ পাতে ছিল ‘মধুরিমা’। এটি এলাচ দেয়া বাজরার পুডিং, চিনির রসে ডোবানো ফিগ এবং পিচ ফলের কম্পোট, চালের পাঁপড়। খাবারের সাথে পানীয় হিসাবে ছিল কাশ্মীরি কাওয়া, ফিল্টার কফি, দার্জিলিং চা। সব শেষে চকোলেট স্বাদের পান।
একটি সূত্র বলছে, রাতের সব খাবার পরিবেশন করা হয়েছে স্টিল বা কাঁসা বা দুই ধাতুর মেশানো পাত্রে। অন্য একটি সূত্র আবার বলছে, রুপোর থালায় পরিবেশন করা হয়েছে সব খাবার।
নৈশভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের অনেকেরই পোশাকে ছিল ভারতীয়ত্বের ছোঁয়া। কেউ আবার পরে এসেছিলেন নিজের দেশের পোশাক।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পরেছিলেন বাংলাদেশের নিজস্ব ঢাকাই শাড়ি। শাড়ির রং ছিল লাইল্যাক অর্থাৎ একেবারে হালকা বেগুনি। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ কুমার জুগনৌথ পরেছিলেন কালো রঙের বন্?ধগলা। আর তার স্ত্রী পরেছিলেন সাদা শাড়ি। সাথে জড়ি বসানো কালো ব্লাউজ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক পরেছিলেন কালো স্যুট-মেরুন টাই। স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি পরেছিলেন আধুনিক আর সাবেকের মিশেলে এক উজ্জ্বল পোশাক। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পরেছিলেন কালো স্যুট, নীল টাই। তার স্ত্রী য়ুকো কিশিদার পরনে ছিল ভারতীয় পোশাক। তিনি পরেছিলেন সবুজ শাড়ি। সাথে গোলাপি ব্লাউজ। শনিবার দুপুরে বিশ্বনেতারা যখন প্রগতি ময়দানে জরুরি বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন, তখন তাদের স্ত্রীদের জন্যও ছিল হরেক রকম ব্যবস্থা। ঢালাও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট (এনজিএমএ) এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিল। সাথে ছিল প্রদর্শনী। নৈশভোজের আগে সেই প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন রাষ্ট্রপ্রধানদের স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা। মধ্যাহ্নভোজের খাদ্যতালিকায় মূলত ছিল দিল্লির ‘স্ট্রিট ফুড’। বিদেশী নেতাদের স্ত্রী এবং পরিবারের অভ্যর্থনায় ছিল দিল্লির চাট আর তড়কা ডাল। তার পাশাপাশি ছিল কুমড়া আর নারকেলের শোরবা, নাগা কালো চালের ভেল, বিট আর পিনাট বাটারের টিক্কি, আনার কুলফি সরবেত, ধীরে ধীরে রোস্ট করা কুমড়া আর নারকেলের কারি, আপ্পালাম, ওয়াইন্ড নেটল রায়তা, জোয়ারের রুটি, নারকেল আর কারি পাতা দেয়া পোলাও। শেষ পাতে ছিল আতার ক্রিম। হাজি আলির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে এই মিষ্টি। সূত্র : আনন্দবাজার