শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

বিচ্ছিন্ন গ্যাস-পানির লাইন পুনঃসংযোগের নামে টাকা লুটছে প্রতারক চক্র

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ডিএনসিসির নতুন ড্রেন নির্মাণ
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের সেনপাড়া এলাকায় গত এক মাস ধরে চলছে নতুন স্যুয়ারেজ লাইন বসানো ও পুরনো লাইন সংস্কারের কাজ। এতে মাটি খননের সময় নিচে থাকা অনেক বাড়ির গ্যাস ও পানির লাইন কাটা পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব লাইন মেরামতসহ পুনরায় সংযোগ করে দেওয়ার কথা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। তবে স্থানীয় একটি প্রতারক চক্র নিজেদের ওয়াসা ও তিতাসের লোক পরিচয় দিয়ে এসব লাইন পুনঃসংযোগ দেওয়ার নামে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদি তাদের দিয়ে কাজ না করানো হয়, তবে বিচ্ছিন্ন হওয়া লাইনের ওপর মাটি ফেলে দেওয়া হবে, এমন ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন বাড়ির মালিকেরা। গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সেনপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডিএনসিসির উদ্যোগে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে নতুন ড্রেন লাইন নির্মাণের কাজ। স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব বাড়ির পানি ও গ্যাসের লাইন কাটা পড়েছে, সেসব বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন যুবক নিজেদের ওয়াসা ও তিতাস গ্যাসের কর্মী পরিচয় দেয়। বিচ্ছিন্ন এসব লাইন নিজেদের লোক দিয়ে পুনরায় সংযোগ করে দেবে বলে জানায় তারা। এ জন্য প্রতিটি বাড়ির মালিকের কাছে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত টাকা দাবি করেছে। তারা এই বলে হুমকিও দেয় যে, যদি তাদের দিয়ে কাজ না করানো হয়, তবে বিচ্ছিন্ন গ্যাস ও পানির লাইনগুলো ওই অবস্থায় মাটি চাপা দিয়ে দেবে। এতে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে ভয় দেখায় এই প্রতারক চক্র। উপায় না পেয়ে কিছু বাড়ির মালিক তাদের টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। আবার কোনও কোনও বাড়ির মালিক রাজি না হওয়ায় তাদের সঙ্গে তর্তে জড়িয়েছে চক্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, এরা এই এলাকার ছেলেপেলে, তবে স্থায়ী বাসিন্দা না। তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের আগে-পিছে থাকে। সেই প্রভাবেই এসব অপরাধ করে বেড়ায়। তাদের সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকেরাও জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেন তিনি। তবে এসব চাঁদাবাজদের নাম বলতে রাজি হননি কেউই। ড্রেনের কাজে নিযুক্ত এক শ্রমিক জানান, আমরা যদি কোনও বাড়ির কাটা পড়া পানির লাইন লাগাতে যাই, কিছু ছেলে এসে ধমক দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলে। তারা না বলা পর্যন্ত ওই লাইনে হাত দিতে নিষেধ করে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাইশা কন্সট্রাকশনের প্রজেক্ট ইনচার্জ ইমরান বাংলা ট্রিবিউকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি সঠিক কিছু বলতে পারবো না। আমাদের শ্রমিকদের কেউ এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত না। বরং কারও পানি বা গ্যাসের লাইন কেটে গেলে আমরা আবার লাগিয়ে দেই। হয়তো একটু সময় লাগে। তখন যদি কোনও বাড়ির মালিক খুশি হয়ে শ্রমিকদের কিছু বকশিস দেয় ভালো, না দিলেও কিছু বলার নাই। তবে বিচ্ছিন্ন হওয়া গ্যাস বা পানির লাইন আমাদেরই লাগিয়ে দেওয়া নিয়ম।’
এ সময় ওয়াসার অঞ্চল পরিদর্শক হাবিব উল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। তিনিও অভিযোগ পেয়ে এলাকা পরিদর্শনে এসছেন। বিচ্ছিন্ন গ্যাস ও পানির লাইন পুনঃসংযোগের নামে একটি চক্রের টাকা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়াসার লোকের টাকা দাবি করার কোনও সুযোগ নেই। আমি এখানে আসছি, কারণ এক বাড়ির মালিক তার সমস্যার কথা অফিসে জানিয়েছেন। তাই দেখতে এসেছি। কোনও সমস্যা হলে আমরা উপস্থিত থেকে, বা তাদের দেখিয়ে দিয়ে যাবো— কোথা থেকে পানির লাইন নিতে হবে। অথবা সংস্কার কাজ করতে হবে। বাড়ির মালিকরা নিজেদের লোক দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন। তবে এসব কাজের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে সমস্যা হওয়ার কথা না।’
এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ জনি বলেন, ‘এ বিষয়ে শুনেছি। কারা জড়িত সেটাও জেনেছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কী আর ব্যবস্থা নেবো। জেলে পাঠানোর মতো অপরাধও না। আবার পুলিশও এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। কাজ করতে গেলে লাইন তো কাটা পড়তেই পারে। তাও সব লাইন না। দুই-একটা বাড়ির লাইন কাটা পড়ে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের একটু ধৈর্য ধরা উচিত। সময় লাগলেও যে ঠিকাদার কাজের সঙ্গে জড়িত, তারাই এসব লাইন লাগিয়ে দেবে। আমিও মাইকিং করে, মসজিদে জুমার নামাজের পর ঘোষণা দিয়ে এসব বিষয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করেছি বারবার। কাউকে কোনও টাকা দিতে হবে না। ঠিকাদারই বিনা খরচে তারাই লাগিয়ে দেবে।’ বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com