পদ্মা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ীতে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এলাকার অন্তত ২০ থেকে ৩০ বিঘা ফসলি জমি। ঝুঁকিতে রয়েছে মিজানপুরের একটি প্রাইমারি স্কুলসহ বসতবাড়ি ও গ্রামীণ সড়কসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি। এ অবস্থায় ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দারা।
রাজবাড়ী জেলার সর্ববৃহৎ এবং জেলা শহরতলীর একটি ইউনিয়ন মিজানপুর। প্রতিবছর পদ্মার ভাঙনে এই ইউনিয়নের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। বর্তমানে ইউনিয়নটির মহাদেবপুর, বেনিনগর, কালিতলা, চরনারায়ণপুরসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফসলি জমি, স্কুল, গ্রামীণ সড়ক ও বসতবাড়ি ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় গত মৌসুমে ডাম্পিং করা বালুভর্তি জিওব্যাগ পানির তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণনে নদীতে ভেসে গেছে। ফলে এবার নতুন করে ভাঙছে ফসলি জমি।
এছাড়া নদী তীরবর্তী হওয়ায় মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়টির শহীদ মিনারটি রয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে। গত কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়টির দুইটি ভবনের একটি ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। স্কুল এলাকায় স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধ না করা ও নদী তীরবর্তী হওয়ায় দিন দিন কমছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা। জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়াতেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আক্কাস আলী সরদার, সিরাজ মন্ডল, জালাল চৌধুরী, দুলাল বিশ্বাস, ইমানসহ অনেকে বলেন, কয়েক বছরে তাদের হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নটির চরনারায়ণপুর, বড় চরবেনিনগর, কালিতলা, মহাদেবপুরের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙছে ফসলি জমি। তারা নদীর পাড়ে পটল, ঢেঁড়শ, ধুন্দুল, উস্তে, বেগুন, শসাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও নানান ধরনের ফসলের আবাদ করতেন। যা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। এবার পানির তীব্র স্রোত ও ঘুর্ণনে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা, ফলে রাতে ভাঙন আতঙ্কে থাকেন তারা।
তারা আরও বলেন, ইউনিয়নের চরছিলিমপুর এলাকা পর্যন্ত স্থায়ীভাবে নদীশাসন হলেও চরনারায়ণপুর, বড় চরবেনিনগর, কালিতলা, মহাদেবপুর এলাকায় কাজ না হওয়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে বাড়ি-ঘরসহ সমস্ত ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে।
তাদের অভিযোগ, এই ভাঙন ঠেকাতে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন যদি বাঁধা না হয়, তাহলে সব কিছুই নদীগর্ভে চলে যাবে। গত বছর বর্ষার সময় নদীর পাড় দিয়ে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয় যা এবার ভাঙন ও স্রোতে ভেসে গেছে। আর বস্তায় ভাঙন ঠেকায় না। ভাঙন রোধে যে পরিমাণ বস্তা ফেলা প্রয়োজন সে পরিমাণ ফেলাও হয় না। অল্প কিছু ফেলে চলে যায়। স্থায়ীভাবে কাজ হওয়া দরকার।
মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নেকবর আলী বলেন, তার স্কুলটি একেবারে পদ্মা নদীর পাড়ে এবং চারপাশ খোলামেলা। যার কারণে সব সময় ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। এর ওপর রয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। গত কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের একটি ভবন নদীগর্ভে চলে যায়। তখন বালুর বস্তা দিয়ে অন্য ভবনটি রক্ষা করা হয়। এরপর থেকে ওই একটিমাত্র ভবনে অফিস কার্যক্রমসহ শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এখন নদীতে স্রোত বেড়েছে, ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়টির শহীদ মিনার ও স্কুলভবন। এগুলো রক্ষার্থে স্থায়ীভাবে নদী শাসনের প্রয়োজন। ভাঙন আতঙ্কে দিন দিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা ভয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান না। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, ভাঙনপ্রবণ এলাকা তারা পরিদর্শনের পাশাপাশি নজরদারিতে রেখেছেন। তবে নদীর পানি কমার সময় ভাঙন দেখা দিলেও এখন ভাঙন নেই। ভাঙন শুরু হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।