রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

এক মণ পাটে, এক কেজি ইলিশ!

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

ঝিনাইদহের শৈলকূপার হাট বাজারগুলোতে পাটের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপজেলায় প্রতিমণ পাট ১৫ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে! যা দিয়ে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, মাঝেমধ্যে তাও হয় না। এমন পরিস্থিতিতে সোনালী আঁশকে ঘিরে কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর সোনালী স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার পাট চাষিরা বলেন, এবার চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে হাট বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় লাভের আশা ছিল কৃষকের। কিন্তু হঠাৎ করে পাটের দাম বাজার কমতে শুরু করায় কৃষক দিশেহারা হয়ে গেছেন। বর্তমানে হাট বাজারে প্রতি মণ পাট ১৫ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা দুই মাস আগে বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে। যার ফলে সোনালী আশে লাভের আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে দরপতনে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় ও পাটকলগুলো পাট না কেনায় দাম কমে আমাদের পাট কিনতে হচ্ছে। এদিকে পাটের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আট হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় আরো বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ১৯ হাজার ৩৭৮মে. টন।
সরেজমিনে উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজার, খুলুমবাড়িয়া, শেখপাড়া, গাড়াগঞ্জ, ভাটই, হাটফাজিলপুর, শিতালী ধাওড়া, কচুয়া বাজারসহ শৈলকূপা হাটে পাটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিমণ পাট ১৫ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের গ্রামের প্রান্তিক কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এক শ’ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছেন। তাতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। পাট পেয়েছেন ১৮ মণ। লাঙ্গলবাঁধ বাজারে তিনি প্রতিমন পাট ১৭ শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি সরকারের কাছে ধান-চালের ন্যায় পাটের দামও নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানান।
উপজেলার ধলহরা গ্রামের পাটচাষি শফি মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর রাসায়নিক সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে পাট বিক্রি করলে লাভ হয় না। এতে পাট চাষে আগ্রাহ হারাবে কৃষক। কুশবাড়িয়া গ্রামের আতিয়ার রহমান, হাটফাজিলপুর গ্রামের বকুল বিশ্বাস জানান পাটে খরচের টাকাও উঠছে না। তাই আগামী বছর থেকে পাটের চাষ আর করব না। এখন জমি বন্ধক রেখে দিনমজুরের টাকা দিতে হচ্ছে। রতিডাঙ্গা গ্রামের বাদশা মোল্লা জানান, বাজারে এক মণ পাট বিক্রি করে এক কেজি ওজনের একটা ইলিশ মাছও হতে চায় না। বর্তমানে পাট হয়ে গেছে কৃষকের গলার ফাঁস। বাজারের পাট ব্যবসায়ী হারাধন কুন্ডু বলেন, সরকারি পাটক্রয় কেন্দ্র না থাকায়, পাট রফতানিকারক ও বেসরকারি পাটকলগুলো পর্যাপ্ত পাট না কেনায় পাটের বাজার অস্থিতিশীল। এক্ষেত্রে পুনরায় সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু করে, সরকার পাট ক্রয়ে ভূমিকা নিলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি। এ ব্যাপারে শৈলকূপা উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হাসনাত জানান, পাটে যে পরিমান খরচ হয় কৃষকের, তাতে বাজারে পাটের দাম আরো বেশি হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com