‘কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। অক্টোবরে নভেম্বরে ডিসেম্বরে কিছুই হবে না’-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, তলে-তলে যাই হোক, দেশের সংকট তাতে কাটবে না।
বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তলে তলে না খেলে প্রকাশ্যে খেলুন। যিনি বাংলাদেশের অহংকার, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচনে কখনো পরাজিত হননি, তাকে তার পছন্দের জায়গায় চিকিৎসার সুযোগ দিন। হাজী সেলিম, মায়া সাহেবের থেকে নিশ্চয়ই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বড়, অনেক উঁচু দরের মানুষ। হাজী সেলিম, মায়া যদি বিদেশে চিকিৎসা পেতে পারেন, জামিন পেতে পারেন, তাহলে বেগম জিয়া কেন পাবেন না?
গতকাল বুধবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘গণতন্ত্র রক্ষায় সুশাসনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শাসমুজ্জামান দুদু বলেন, সরকার নির্বাচনের তোড়জোর করছে। তলে তলে আড়ালে আবডালে যেসব জিনিস হয়, সেটি ষড়যন্ত্র। কিছুদিন আগে নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমন কিছু আমরা ভারতকে দিয়েছি, ভারত কখনোই তা ভুলতে পারবে না। কী দিয়েছেন তিনি, সেটা বলেননি। যেহেতু বলেননি তাহলে সেটি তলে-তলের ব্যাপার। সেজন্য আমি বলি, তলে-তলের কোনো ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তির কারণ হবে না। তলে-তলের ঘটনা রাজনৈতিক সংকট মীমাংসা করবে না। দেশে কি দুটি আইন চলছে—প্রশ্ন রেখে দুদু বলেন, একটি আইন বিরোধীদলের জন্য, আরেকটি সরকারিদলের জন্য। এমন দেশ পৃথিবীর আর কোথাও আছে আমার জানা নেই।
দেশে ঘোরতর অন্ধকার সময় চলছে মন্তব্য করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, এত খারাপ সময়ে বাংলাদেশ আগে কখনো নিপতিত হয়নি। বাংলাদেশে এখন কথা বলা যায় না। সত্য কথা যদি আপনি বলেন, তাহলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবার সে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক যেই হোক। এমনকি সে যদি দেশের বাইরেও থাকে, তাহলেও বিপদে পড়তে পারে, অর্থাৎ মামলা খেতে পারে। তার স্বজনরা যারা দেশে আছেন, তারা গ্রেপ্তারও হতে পারেন। তাদের মালামাল ক্রোক হতে পারে।
তিনি বলেন, এ এক বিচিত্র দেশ। যে দেশ গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে, এক সাগর রক্ত দিয়েছে, মা-বোনরা আব্রু হারিয়েছে, লক্ষ লক্ষ সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকারের জন্য। কিন্তু ৫২ বছর পরে এসে সে দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকার নেই। চাইলেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। কেন্দ্রে গেলেই শুনবেন, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। কৃষক দলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, যে নেত্রী ১৬ টাকার চাল ১০ টাকায় খাওয়াবেন বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এসে ৬০-৮০ টাকা দামে চাল খাওয়াচ্ছেন। এটা কেমন দেশ, যারা অবলীলায় নিজেদের ওয়াদা ভুলে যান, খর্ব করে। এ কেমন দেশ, যেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আপনি ঘরে থাকেন বা বাইরে, আপনি ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন এ নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, উদ্যোগ যত ছোট বা ক্ষুদ্র হোক না কেন, লক্ষ্য যদি ভালো হয়, তাহলে সাফল্য অবধারিত। আসুন বিএনপিসহ যেসব বিরোধীদল এখন রাস্তায় দেশের মর্যাদা, রাজনীতি, সমস্যা নিরসন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে, আন্দোলন করছে, সেই উদ্যোগে আমরা সবাই শরিক হই। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন। মহাসচিব আলহাজ্ব আহম্মেদুর রহমান খোকনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।