চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মহিষের দইয়ের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। বিয়ে, আকিকা, জেয়াফতসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে মহিষের দই না থাকলে যেন অনুষ্ঠানের পূর্ণতা পায় না। অনেকে মিষ্টির বিকল্প হিসেবে নতুন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিয়ে যান এখানকার দই। যুগ যুগ ধরে এমন রীতি চলে আসছে মিরসরাই উপজেলায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা বছরই মিরসরাইয়ের মহিষের দইয়ের চাহিদা থাকে চট্টগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন জেলায়। রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। উপজেলার উপকূলীয় ইছাখালী ইউনিয়ন, বামনসুন্দর ও রহমতাবাদ এলাকা থেকে দই তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এখানকার দইয়ের স্বাদেও আছে কিছুটা ভিন্নতা।
সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি বিদায় অনুষ্ঠানে ৩০০ জনের খাবারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাড়তি আকর্ষণ ছিল মহিষের দই। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘চরা লের মহিষের দই হলো আমাদের ঐতিহ্য। বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে দইয়ের ব্যবস্থা করে থাকি। এবার শিক্ষকদের বিদায় অনুষ্ঠানে খাবার শেষে দইয়ের আয়োজন অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।’ মিরসরাই কলেজ রোডে কথা হয় উপজেলার রহমতাবাদ থেকে দই বিক্রি করতে আসা সাহেদুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে এলাকার বিভিন্ন খামারির কাছ থেকে মহিষের দুধ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই দুধ থেকে দই তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। অনেকে বিয়ে, জেয়াফত, আকিকা অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম দইয়ের অর্ডার দেন। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবস্থিত অনেক হোটেলে গ্লাসভর্তি মহিষের দই বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাসের দাম ২৫-৩০ টাকা। কাটাছরা ইউনিয়নের বঙ্গনুর এলাকার বাসিন্দা ওমর শরীফ বলেন, বছরে আমাদের বেশ কয়েকটা পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকে। তবে প্রতিটি অনুষ্ঠানে মহিষের দই থাকা চাই। এজন্য অনুষ্ঠানের ৩-৪ দিন আগে অর্ডার দিতে হয়। অনুষ্ঠানে এসে কারিগররা দই তৈরি করে দেন।
ইছাখালী ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার দই বিক্রেতা নুরনবী। তিনি জানান, আগের তুলনায় মহিষের দই অনেক কমে গেছে। এর কারণ অর্থনৈতিক অ ল হওয়ার পর মহিষের চারণভূমি কমে গেছে। এজন্য এখন খামারে মহিষ রাখা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকরা। যে খামারির কাছে আগে শতাধিক মহিষ ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এজন্য দুধের দামও বেড়ে গেছে। আরেক বিক্রেতা নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, তারা প্রতিকেজি দুধ কেনেন ১০০ টাকা করে। আর দই তৈরি করে বিক্রি করেন ২৫০-৩০০ টাকা কেজি। মাটির হাঁড়িতে দই বসানো হয়।
উপজেলার চরশরৎ এলাকার বাসিন্দা শাহ জালাল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় আমাদের কাছে দুই শতাধিক মহিষ ছিল। কয়েকজন লোক মহিষ পালনের জন্য থাকতো। এখন মহিষের সংখ্যা ১০০ হবে।’ চাকরিজীবী শামসুল আলম বলেন, মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় এলাকার দই খাঁটি। এখানে কোনো ধরনের ভেজাল মেশানো হয় না। এখানকার দইয়ের বেশ কদর রয়েছে। এলাকার বাইরে থেকে এসেও অনেকে দই নিয়ে যান।
মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম মলিয়াইশ গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন প্রতিটি অনুষ্ঠানে অন্য আইটেমের সঙ্গে মহিষের দই থাকতো। দই ছাড়া অনুষ্ঠান শূন্য লাগতো। এখনো অনেকে অনুষ্ঠানে দইয়ের ব্যবস্থা থাকে। তবে বিয়ে অনুষ্ঠানের চেয়ে জেয়াফত ও মেজবানের অনুষ্ঠানে মহিষের দই বেশি করা হয়। মিরসরাই উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, মহিষের দই হজমে সহায়তা করে। এর ল্যাকটোবেসিলিসের মতো উপকারী ব্যাকটেরিয়া পেটের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বিতাড়িত করে। প্রতিদিন মহিষের দই খেলে হৃদরোগ প্রতিরোধ হবে।