শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

একজন বক্তার আবশ্যিক গুণাবলি

এ এস এম মাহবুবুর রহমান
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। ইসলামী কনফারেন্স, আলোচনাসভা যত্রতত্রই দেখা যায়। আসছে শীতের সময় পরিবেশ, পরিস্থিতি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাপক ইসলামী সম্মেলন হয়। মুসলিম উম্মাহকে কল্যাণের জন্য আহ্বান, হেদায়েতের দিকে আহ্বানের জন্য ইসলামিক কালচারাল অনুষ্ঠান অবশ্যই ভালো কাজের দাবিদার। সমস্যা হচ্ছে বর্তমান সমাজে আমরা দেখতে পাই ইসলামী সম্মেলন বা ওয়াজ মাহফিলের নামে কিছু বক্তা লাগামহীন কথাবার্তা, সুর-বেসুরে নানা কিচ্ছাকাহিনী, প্রেমকাহিনী, মুভির বর্ণনা, কৌতুক, গান, রম্য কথা, হাসি-তামাশা, ফিতনা, ফাসাদ, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। ফলাফল হিসেবে পরস্পরে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্তে ফেলে দিচ্ছেন। ঐক্যের পরিবর্তে দ্বন্দ্ব আর সঙ্ঘাতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ইসলামকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তাই অনুষ্ঠানে এমন সব বক্তাকে ইনভাইট করতে হবে যাদের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হবে। দাওয়াতি কাজ করাই দাওয়াতের ক্ষেত্রে একজন বক্তার/দাঈর শ্রেষ্ঠ গুণ। তা ছাড়া একজন ব্যক্তি হিসেবে দাওয়াতি কাজের জন্য আরো কিছু গুণাবলি থাকা দরকার, যা নি¤œলিখিত ধারায় ভাগ করা যায়- ক. মানবীয় প্রকৃতি ও স্বভাবজাত গুণাবলি; খ. অর্জিত গুণাবলি; গ. জ্ঞানগত গুণাবলি; ঘ. সাংগঠনিক গুণাবলি। বিশ্বের অন্যান্য আলেম-উলামাও বক্তাদের গুণাবলি উল্লেখ করেছেন তবে এমনভাব সার্বিক দিকটি তুলেছেন দাওয়াহ বিষয়ক গবেষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার দাওয়াহ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান আনোয়ারী হাফিজাহুল্লাহ। তন্মধ্যে নিচে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিক তুলে ধরা হলো।
অর্জিত গুণাগুণ : ১. সত্যবাদিতা : সত্যবাদিতা এমন একগুণ যার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কথাবার্তায় সত্যবাদিতা মুমিনের অপরিহার্য গুণাগুণ। মহানবী সা: বলেছেন, ‘সত্য মানুষকে নাজাত দেয়। আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।’ তাই দাঈকে সত্যবাদী হতে হবে এবং মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
২. আতিথেয়তা : আতিথেয়তা একটি মহৎ গুণ। আল্লাহর নবীরা এই গুণে গুণান্বিত ছিলেন। এটি তাদের সুন্নত ছিল। আল-কুরআনে দেখা যায়, হজরত ইবরাহিম আ:-এর কাছে যখন মানুষের রূপে ফেরেশতা আগমন করেছিল, তখন তিনি তাদেরকে মেহমান মনে করে তাদের কাছে ভুনা খাসি পেশ করেছিলেন। বিপরীতে আমাদের বক্তা বা দাঈদের এটি হারিয়ে যাওয়া গুণ। আমাদের উচিত আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
৩. দয়া মমতা : দয়ামায়া আল্লাহর গুণ। যা গোটা সৃষ্টি জগৎব্যাপী প্রসারিত। তাই মানবসমাজেও পরস্পরে দয়ামমতা থাকা একান্ত অপরিহার্য।
৪. অল্পে ভেঙে না পড়া, আত্মনিয়ন্ত্রণ করা : দাঈকে সামান্য একটু ব্যাপারে বা অসঙ্গতিতে কিংবা প্রতিকূল পরিবেশে ভেঙে পড়লে চলবে না। তাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আত্মসংবরণ করতে হবে। তা ছাড়া মনে যা চায় প্রবৃত্তির তাড়নায় তা করলে চলবে না। ইসলামী বিধিবিধানের আলোকে তাকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ অবস্থায় নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
৫. তাকওয়া : তাকওয়া পরহেজগারি মু’মিন জীবনের মানদ-। মুত্তাকি হওয়া দাঈর বড় গুণ। দাঈ যদি পরহেজগার না হন তবে তার আচার-আচরণে অনেক বিচ্যুতি প্রকাশ পেতে পারে। এ জন্য তাকওয়াকে আল-কুরআনে মু’মিন জীবনের পাথেয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। মুত্তাকি হওয়া ব্যতীত অনলবর্ষী বক্তৃতা, বলিষ্ঠ আলোচনা কোনো কিছুই শ্রোতার মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারবে না।
বুদ্ধি ও জ্ঞানগত : ১. অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতা। দাঈকে যেকোনো বিষয় সহজেই অনুধাবন করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যা বুঝতে অনেকসময় নেয় বা বুঝতে পারে না, সেখানে দাঈকে বিষয়ের গভীরে গিয়ে এর মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। কার্যকারণ ও বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।
২. বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী জনমানুষ সম্পর্কে জানতে হবে। এ বিশ্বে বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষ রয়েছে। তাদের রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি। তাই দাঈকে এসব দিকে ওয়াকিবহাল হতে হবে।
৩. দাওয়াহ সম্পর্কে জ্ঞান : দাওয়াতের বিষয়বস্তু, দাওয়াতের ইতিহাস, পদ্ধতি, কৌশল, মাধ্যম, বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবেলার ধরন, সমকালীন প্রসঙ্গ প্রভৃতি ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
৪. সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গী ও সিদ্ধান্তে পৌঁছার সামর্থ্য : দাওয়াতি কাজে বিভিন্ন ধরনের তত্ত্ব ও তথ্যের সম্মুখস্থ হতে হবে। সেখানে দাঈকে সূক্ষ্মদর্শী হতে হবে। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা, অনুসন্ধান ও বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। এ সূক্ষ্মদর্শিতা ও অন্তর্দৃষ্টিকেই আল-কুরআনে বাসিরাত বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সাংগঠনিক গুণাবলি : ১. দায়িত্ব সচেতনতা : দায়িত্ব সচেতনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দাঈর সুচারুরূপে পালন করা কঠিন। ইসলামের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্ববান তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে (পরকালে) অবশ্যই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’
২. সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবোধ ও সুনিপুণতা : দাঈকে নিজের মাঝে শৃঙ্খলাবোধ জাগরণ করতে হবে। প্রতিটি কাজ সুশৃঙ্খল ও যথাযথভাবে পালনে অভ্যস্ত হতে হবে। মানুষকে সংগঠিত করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। কাকে কোন জাগায় নিয়োগ করলে ভালো হবে এবং কাজে কিভাবে পরিচালিত করা যায়, তা সূক্ষ্মভাবে দাঈকে অনুধাবন করতে হবে।
৩. আত্মসম্মান বোধ : দাঈর মধ্যে আত্মসম্মান বোধ থাকতে হবে। তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে, এমন কোনো কথা বলা যাবে না বা কোনো কাজ করা যাবে না। এ জন্য আল-কুরআনে মু’মিনদের গুণাবলিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আর যারা বেহুদা বিষয় থেকে বিরত থাকে।’ (সূরা মু’মিন-৩)
৪. বিচক্ষণতা : পরিবেশ পরিস্থিতি অনুধাবন, সুদূরপ্রসারী চিন্তা এবং সমসাময়িক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে নিখুঁত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিচক্ষণতা একজন দাঈর মধ্যে থাকতে হবে। তাকে বেহুদা, বেফাঁস কথা বলা হতে বিরত থাকতে হবে। অসময়োচিত কথা পরিহার করতে হবে।
৫. গোপনীয়তা রক্ষা করা : প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু দুর্বল দিক থাকে। দাঈর উচিত হবে মানুষের ত্রুটি গোপন রাখা। অপরের ছিদ্রান্বেষণ না করা। নিন্দা না করা।
৬. ইখলাস : দাঈকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। পার্থিব কোনো স্বার্থ সুনাম ইত্যাদি অর্জনের উদ্দেশ্য কখনো তাড়িত হওয়া যাবে না। অন্যথায় তার দাওয়াত মানুষের কাছে গ্রহণীয় হবে না। আর আল্লাহর কাছেও কোনো রকম আবেদন সৃষ্টি করবে না। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা কখনো সঠিকটি তার মানদ- হতে পারে না। তাই ভাইরাল বক্তা নিয়ে এসে ম মাতানোর চেয়ে যোগ্য, ইলমি বক্তাকে দাওয়াত দিয়ে সুস্থ মনমানসিকতার পরিচয় দিয়ে সমাজকে কল্যাণকর কিছু উপহার দেয়ার অনুরোধ রইল। লেখক : উপ দফতর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com