সুন্নাহ এটি আরবি শব্দ। যার অর্থ- আদর্শ, রীতিনীতি, পদ্ধতি ও পন্থা ইত্যাদি। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আমল, আখলাক, অনুসরণ-অনুকরণ; তাঁর কাজ এবং তিনি যা করেছেন, সাহাবিদের করতে বলেছেন। কিংবা সাহাবিদেরকে করতে বারণ করেননি; বরং মৌন সমর্থন করেছেন। এ জাতীয় নিয়ম নীতিনৈতিকতা; পদ্ধতি ও আদর্শের অনুসরণকেই পরিভাষায় সুন্নাহ বলা হয়।
যেসবের মধ্যে রয়েছে আমাদের মানবজাতির জন্য অসংখ্য কল্যাণ ও সমূহ উপকারিতা। এমনকি গুনাহ মাফের ওয়াদাও রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। কুরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান-৩১)
এ আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিররা লিখেছেন, ‘ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতির দাবি ছিল- আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসি। আল্লাহ তায়ালাও আমাদেরকে ভালোবাসেন। বিশেষ করে খ্র্রিষ্টানরা হজরত ঈসা আ: এবং তাঁর মা হজরত মারইয়াম আ:-এর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসায় এ পরিমাণ বাড়াবাড়ি করেছিল যে, তাঁদেরকে উপাস্যের আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। আর তারা এমনটি এই মনে করে করত যে, এর দ্বারা তারা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভে ধন্য হতে পারবে। তাই আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে উপরোক্ত আয়াতে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন-
কেবল মৌখিক দাবি এবং মনগড়া পদ্ধতি অনুসরণ করে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না; বরং আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা লাভ করার পথ একটিই, তা হলো- শেষ নবী মুহাম্মদ সা:-এর ওপর ঈমান আনা এবং তাঁর অনুসরণ করা।
নবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যে কাজের নির্দেশ আমি দিইনি, তার সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আনাস রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ তথা আদর্শকে ভালোবাসে, (এবং সুন্নাহকে অনুসরণ করে জীবনকে পরিচালিত করে) সে যেন আমাকে ভালোভাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি)
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেছেন- নবী করিম সা: বলেন, ‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে অস্বীকার করে সে ব্যতীত।’ সাহাবিরা প্রশ্ন করেন, অস্বীকারকারী কে? তিনি বলেন, ‘যে আমাকে অনুসরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল। আর যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করে তথা আমার সুন্নাহ ও আদর্শকে অস্বীকার করে। সে-ই হলো আমাকে অস্বীকারকারী।’ (বুখারি) লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর