আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপ
দেশের বাইরে মেয়েদের ওয়ানডেতে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখা গেলো। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে নিখুঁত পারফরম্যান্স করলো তারা। তাতে এলো ঐতিহাসিক জয়। হলো রেকর্ডের ছড়াছড়ি। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের দুই সফরে হোয়াইটওয়াশ হওয়া বাংলাদেশ প্রথমবার ৫০ ওভারের ম্যাচ জিতলো। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে ১১৯ রানে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু করলো নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। বিজয় দিবসে ইতিহাস গড়ে এই জয় মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করেছেন অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার ওয়ানডে জেতার পাশাপাশি একাধিক রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে তো বটেই, তাদের করা ৩ উইকেটে ২৫০ রান দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়া দেশের বাইরে সর্বোচ্চ ৯১ রানের কীর্তি গড়েছেন মুর্শিদা খাতুন। সবশেষে মিলেছে রানের হিসাবে রেকর্ড ব্যবধানে জয়ও। দলের রেকর্ড সংগ্রহের পর বল হাতে সুলতানা খাতুন ও মারুফা আক্তার শুরুতেই ধাক্কা দেন। চার বলের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সুলতানার এক্সট্রা বাউন্সে বল লরা উলভারডটের ব্যাট ছুঁয়ে নিগার সুলতানার গ্লাভসে ধরা পড়ে। মারুফার পেসে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তাজমিন ব্রিটস।
৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর সুনে লুস ও আনেকে বোশ প্রতিরোধ গড়েন। সতর্ক ব্যাটিংয়ে তারা রানের চাকা সচল রাখেন। ১৩তম ওভারে নাহিদা আক্তার এই জুটি ভেঙে দেন। তার এক্সট্রা বাউন্সের বল বোশের ব্যাটে লেগে নিগারের হাতে ধরা পড়ে। ৪১ রানের জুটি ভেঙে দেওয়ার পর আরেক সেট ব্যাটার লুসকে বদলি ফিল্ডার লতা মন্ডলের ক্যাচ বানান বাংলাদেশি স্পিনার। তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০তম উইকেট পান নাহিদা। তারপর জাদু দেখান রাবেয়া খান। টানা দুই ওভারে দুটি উইকেট শিকার করেন এই স্পিনার। জাদুকরী এক ডেলিভারিতে নাডিন ডি ক্লার্ককে বোল্ড করেন তিনি। রাবেয়া তার পরের ওভারে ডেলমি টাকারকে ফেরান। নিগারের ক্যাচ হন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার। ৭৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ জয়ের অপেক্ষা করতে থাকে।
ফাহিমা খাতুন বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চেপে ধরেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে পেয়ে যান উইকেট। সিনালো জাফটা তার কাছে পরাস্ত হন। গুগলি বল আঘাত করে স্টাম্পে। পরের বলে নোনকুলুলেকো এমলাবাকে নাহিদার ক্যাচ বানান ফাহিমা। ৯৫ রানে ৮ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। রক্ষণাত্মক শট খেলে তাকে হ্যাটট্রিক করতে দেননি মাসাবাতা ক্লাস। নবম উইকেটে মার্ক্স ও ক্লাস শক্ত প্রতিরোধ গড়েন। অবশেষে ৫৩ বল পর আরেকটি উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। সুলতানা ৩৬ রানের জুটি ভেঙে দেন। ক্লাস ৭ রান করে ফাহিমার হাতে ধরা পড়েন। পরের ওভারে নাহিদার বলে মার্ক্স বোল্ড হন। ৩৬.৩ ওভারে ১৩১ রানে অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন নাহিদা। দুটি করে উইকেট পান মারুফা, ফাহিমা ও রাবেয়া। এর আগে মুর্শিদা দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে এনে দেন রেকর্ড সংগ্রহ। দেশের বাইরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের কীর্তির পাশাপাশি আরেকটি রেকর্ড গড়েন বাঁহাতি ব্যাটার। বাউন্ডারি থেকে ৪৮ রান করেন তিনি, ভেঙে দেন সালমা খাতুনের ৪৪ রানকে। ১০০ বলের ইনিংসে ১২টি চার মারেন মুর্শিদা। প্রত্যাশিতভাবে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। ১-০ তে এগিয়ে থেকে আগামী ২০ ডিসেম্বর পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।