সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন

অহঙ্কারীর পরিচয় ও পরিণতি

মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

আমিই বড়। আমার থেকে সেরা আর কেউ নেই। এ জাতীয় দম্ভ প্রকাশ করা অহঙ্কারী মানুষের পরিচয় বহন করে। নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা, বড়ত্ব প্রকাশ করা, অন্যকে ছোট ভাবা ও হেয়প্রতিপন্ন করাই অহঙ্কার। হাদিসের পরিভাষায়, হককে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হলো অহঙ্কার। হজরত সালমা ইবনুল আকওয়া রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি অহঙ্কারবশত নিজেকে বড় মনে করে মানুষদেরকে এড়িয়ে চলতে থাকে। অবশেষে তার নাম অহঙ্কারী ও ঔদ্ধত্যদের তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সে অহঙ্কারী ও ঔদ্ধত্যস্বভাবের ব্যক্তি বিপদে পতিত হয়’ (তিরমিজি)।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ- তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহঙ্কার করবে, এটি হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা আল-আরাফ-১৩)। জমিনে যারা অন্যায়ভাবে অহঙ্কার করে বেড়ায়, আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটিকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটিকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে’ (সূরা আল-আরাফ-১৪৬)। অহঙ্কারীর স্থায়ী ঠিকানা জাহান্নাম ছাড়া অন্য কিছু নয়। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা- ‘কাজেই তোমরা দরজাগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করো, তাতে স্থায়ী হয়ে। অতঃপর অহঙ্কারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট’ (১৬. সূরা আন-নাহল-২৯)! ‘অহঙ্কারীর আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়’ (সূরা আয-জুুমার-৬০)? আবার একই সূরার ৭২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দেন- বলা হবে, ‘জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ করো, তাতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। অতএব অহঙ্কারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।’
অহঙ্কারীরা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ থেকে বি ত থাকবে। সূরা আল-আরাফের ৪০ নম্বর আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে এবং তা সম্বন্ধে অহঙ্কার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সুচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আর এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দেবো।’ হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা: থেকে এ আয়াতের বর্ণিত এক তাফসিরে উল্লেখ রয়েছে যে, তাদের আমল ও দোয়ার জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না। অর্থাৎ তাদের দোয়া কবুল করা হবে না এবং তাদের আমলকে ওই স্থানে যেতে দেয়া হবে না, যেখানে আল্লাহর নেক বান্দাহদের আমলসমূহ সংরক্ষিত রাখা হয়। হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- নবী করিম সা: বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। একজন বলল, যেকোনো ব্যক্তি তো চায় যে, তার কাপড়টি সুন্দর হোক, জুতাটি আকর্ষণীয় হোক (এটিও কি খারাপ)? তিনি বলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহঙ্কার হলো, ‘গর্বভরে সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করা’ (মুসলিম)।
মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বলো না এবং জমিনে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো ঔদ্ধত্য ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না’ (সূরা লুকমান-১৮)। তাফসিরে কুরতুবি ও ফাতহুল কাদিরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, লোকদের সাথে সাক্ষাৎ ও কথাবার্তার সময় মুখ ফিরিয়ে রাখার মাধ্যমে যদি তাকে অপমান করার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা নিষিদ্ধ হবে। আয়াতের শেষাংশে মুখতাল ও ফাখুর শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনায় এসেছে- মুখতাল মানে হলো, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে বড় কিছু মনে করে। আর ফাখুর হলো, যে অন্যের কাছে নিজের বড়াই প্রকাশ করে। ফাতহুল কাদিরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, মানুষের চালচলনে অহঙ্কার, দম্ভ ঔদ্ধত্যের প্রকাশ তখনই অনিবার্য হয়ে ওঠে, যখন তার মাথায় নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস প্রবেশ করে এবং সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়।
অহঙ্কার থেকে রক্ষা পেতে চাইলে আত্মসমালোচনা ও আত্মপর্যালোচনার বিকল্প নেই। নিজেকে ছোট ও ক্ষুদ্র ভাবতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। দোয়া করতে হবে। বিনয় ও নম্রতার চর্চা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। ক্ষমতা, মেধা, যোগ্যতা, সৌন্দর্য, সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মালিক নিজে নই; বরং আল্লাহ তায়ালা তা দান করেছেন। এই চিন্তা সর্বদা অন্তরে জাগরুক রাখা জরুরি। দুনিয়াতে প্রাপ্ত নিয়ামতগুলো অস্থায়ী ও ক্ষণিকের। এই মনোভাবে বিশ্বাসী হওয়াটা অহমিকা থেকে দূরে রাখতে সহযোগিতা করবে। লেখক : সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com