তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলসমূহের ডাকা অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১২টায় আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে মিছিল বের করে পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব,পল্টন, নাইটিংগেল মোড় ঘুরে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড়ে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে তা শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সিপিডির প্রতিবেদন বলা হয়েছে- গত ১৫ বছরে অনিয়ম করে ব্যাংক থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। সিপিডি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রেফারেন্সে এই তথ্য দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। জিএফআই বলছে- প্রতিবছর আমদানি-রফতানির আন্ডারভয়েস-ওভারভয়েসসহ বিভিন্নভাবে ৭২ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হচ্ছে ,অন্যান্য সংস্থার মতে ১ লক্ষ কোটি। তারা বলছে- ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নাই, অর্থনৈতিকখাত দুর্বৃত্তদের দখলে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন ও শ্রমিক অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের কথা বলছে। দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন না থাকলে তো ব্যাংকিং খাতে সুশাসন কিংবা শ্রমিক অধিকার, নাগরিক অধিকার থাকবে না। গণতন্ত্র, সুশাসন, নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে ইউরোপ-আমেরিকা সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে। যার ভুক্তভোগী হবে গোটা দেশের জনগণ। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান, এখনো সময় আছে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন, দেশ রক্ষা করুন।
পুলিশসহ প্রশাসনের অনেকে সরকার পরিবর্তন হলে চাকরিচ্যুত বা ওএসডি হওয়ার আশঙ্কায় আছেন উল্লেখ করে নুর বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি কারো চাকরি যাবে না। আর বর্তমান সরকার আজকে পরিবর্তন হলেই কালকে বিএনপি বা অন্য কেউ ক্ষমতায় চলে আসছে বিষয়টি তো এমন নয়। প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি তৈরি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় সরকার হতে পারে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বলেন মাঝখানে তো একটা সরকার থাকবে। সুতরাং আপনাদের ভয়ের কিছু নাই। দেশকে বাঁচাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। ভিনদেশী মদদে এদেশে কোনো একতরফা নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। আমাদের আন্দোলন চলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। দলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ১৮ সালের নির্বাচনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়ে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেছে সরকার। এইবারও একতরফা ডামি নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ১৩ দিনের জন্য মাঠে নামানো হচ্ছে। এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নামানো কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত না। সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনীসহ সকল বাহিনীর কর্মকর্তাদের বলবো, আপনারা জনগণের পাশে থাকুন। গণতন্ত্রের সরকার ক্ষমতায় আসলে আপনাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হবে। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন- বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন- বিএনপি সন্ত্রাসী দল, জামায়াত রাজাকারের দল। তাহলে ৯৬-তে কেন রাজাকারের সাথে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিলো? তাহলে তো বলতেই হয় আওয়ামী লীগ রাজাকারের পৃষ্ঠপোষক। আওয়ামী লীগের কথা শুনে আমরা বিভেদ জিইয়ে রাখলে চলবে না। সকল রাজনৈতিকদলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সফল করতে হবে।
নুর বলেন, আমরা জনগণের প্রতি আহ্বান করছি, আগামী ৭ জানুয়ারি ‘আমরা ও মামুরা’ মিলে ‘আমি ও ডামি’ নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। বিভিন্ন জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের আটক করা হবে। কিন্তু এতেই কি আন্দোলন থেমে যাবে। এই আন্দোলনে জনগণের সাথে রাজনৈতিক দলের সংহতি এবং রাজনৈতিক দলের সাথে জনগণের সংহতি তৈরি হয়েছে। সুতরাং এই সরকারের পতনের পর অবশ্যই জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসবে। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী বিরোধীদল হতে চায়। কিন্তু জনগণের সাথে বেইমানি করার কারণে জাতীয় পার্টির কোনো অস্তিত্ব জনগণ রাখবে না।
স ালনা করেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম ফাহিম। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, আব্দুজ জাহের, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, সহ সভাপতি বিপ্লব কুমার পোদ্দার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদল রবিউল হাসান, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ, পরিষদ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমসহ নেতাকর্মীরা।