বিদায় ২০২৩। বছরটি অস্থিরতা দিয়ে শুরু হয়ে অনিশ্চয়তা দিয়ে শেষ হলো। বছরটির প্রতিটি মুহূর্তের মাশুল গুনতে হয়েছে বাংলাদেশ, ইউক্রেন, রাশিয়া, ফিলিস্তি, গাজা, মিয়ানমার কাশ্মীরসহ বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মানুষ। বিশেষ করে বাংলাদেশ মহামারি করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু অস্থিরতা থেকে মুক্তি পায়নি এদেশের জনগণ। অনৈতিক রাজনীতির ঢামাঢোল, নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অন্তরালে দুর্নীতির চরম বিস্তার, নিত্য ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি বিভীষিকাময় করে তোলে সাধারণ মানুষ জীবন। ফলে নানা অস্থিরতা, জঞ্জাল আর সংকট সঙ্গে নিয়েই পুরো বছর কাটাতে হলো মানুষের। তবে এ বছরের নানা সংকটের মধ্যেও উন্নয়নের উত্তাপ ছড়ায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের টানেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বিগত দেড় দশক ধরে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে চলছে নির্যাতনের স্টিমরোলার। গায়েবি, নাশকতা ইত্যাদি ইত্যাদি নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার জালে আটকা বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের এখন আর রাজবন্দির মর্যাদা দেয়া হয় না। তাদের সাথে দাগী সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করা হয়। সরকারের এমন একগুঁয়েমি আচরণের খেসারত এদেশের মানুষ বিগত ১৪ বছরের মতো বিদায়ী বছরেও দিয়েছে। তারা প্রতিবাদমুখর। প্রতিবাদে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন।
বিদায়ী বছর দেশেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। গড়ে পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কোনোটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। অন্য সব ধরনের জিনিসের দামও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না। বিশেষ করে নাগরিক জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য-পানি, শিক্ষা, চিকিৎসার ন্যায্য দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। আয়ের সিংহভাগ খরচ হয়ে যাচ্ছে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে। কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় অনেকে এ তিনটি চাহিদাও পূরণ করছেন কাটছাঁট বাজেটে। সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমানের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার সিন্ডিকেট, অর্থপাচার, লুটপাট, ঘুষ-দুনীতি, চাঁদাবাজি এবং রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ হলে অনেক সঙ্কটই কেটে যাবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। ২০২৪ সাল হোক সেই প্রত্যাশা পূরণের নতুন বছর। আমীন।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে বছরজুড়ে। সারা বছর আলোচনায় ছিল দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। এজন্য বার বার উদ্বেগ জানিয়েছে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলেছেন, ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মীদের আন্দোলনেও চলছে দমন-পীড়ন। এছাড়া সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের নেতাদের বিচারিক হয়রানি করা; এমনকি বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনকারী আইন সংস্কারে ব্যর্থতা গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে জানিয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে; ততই রাজনৈতিক সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেফতার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতারের ঘটনা ঘটতে থাকে। এছাড়া নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের আদিলুর রহমান খান, অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলানসহ বিভিন্ন ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের বার বার আদালতে যেতে হয়েছে। সাজা হয়েছে।
জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ড ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। নাদিম বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। ১৪ জুন পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার সময় সেই এলাকার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলম বাবুর সমর্থকরা তার ওপর হামলার করে। নাদিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরদিন সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ২০২৩ সালের আলোচনায় ছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার কথা। দুই বছর ধরে তদন্ত পরিচালনা, বার বার শুনানি এবং দেশের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও কৌঁসুলিরা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫ হাজার ৬০০টির বেশি মামলা এখনো চলমান। এটা সরকারের হিসাব। আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এসব মামলায় প্রখ্যাত অনেক সাংবাদিক-সম্পাদককে আসামি করা হয়েছে। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়েও উদ্বেগ রয়ে গেছে।
জনগণের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল বানানো হলেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কেবল মেট্রোরেল নয়, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এজন্য ভাড়া বেশি করা হয়েছে বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা। দেখা গেছে, ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়া ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে দুই থেকে পাঁচগুণ বেশি। ‘মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের ভাড়া ১০০ টাকা করার প্রতিবাদও করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।’ খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ যাবতকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। করোনা মহামারিকালে ব্যাংক ঋণ আদায়ে দেয়া বিশেষ ছাড় বছরের শুরুতে তুলে নেয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
এ বছর বিশ্বে আর কোনো দেশে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু হয়নি। পুরো বছর শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৬ এবং নারী ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬০। মোট মৃত্যু ১ হাজার ৬৬৭, যার মধ্যে নারী ৯৫৪ ও পুরুষ ৭১৩ জন। গড়ে প্রতিদিন ৯১৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ৫। এ বছর ১৫ বছরের কম বয়সী ১৬৬ শিশু মারা গেছে ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গুতে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি। তবে সরকারি তথ্যের বাইরে বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের একটি অংশ নিজেদের মতো করে চিকিৎসা নিয়েছে, অনেকে আবার চিকিৎসা নেননি। সরকারি হিসাবের বাইরে আক্রান্তদের সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন।। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন (২২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ১৫৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
২০২৩ বছরজুড়েই সরকারকে নানামুখী চাপ সামলাতে হয়েছে। ভারত, চীন, রাশিয়া, মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় বছরজুড়ে বাংলাদেশকে কী ধরনের চাপ সামলাতে হয়েছে। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করার লক্ষ্য ছিল সরকারের। মিয়ানমারের দিক থেকেও ইতিবাচক সাড়া ছিল। প্রত্যাবাসনে গতি আনতে বন্ধু রাষ্ট্র চীনের দূতিয়ালিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মিয়ানমারের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে সেই সম্ভাবনা হোঁচট খেয়েছে। মিয়ানমারে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করাতে গেলে তা টেকসই হবে না বলে আটকে থাকলো পুরো বছর।
ডলার সংকট সামাল দিতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তারপরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। এর ফলে কমে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন সেই রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এক বছর আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা ছিল বছরের আলোচিত ঘটনা। রাজধানীর যে মার্কেটে কোটি কোটি টাকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা হতো, সেটি এক রাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৪ এপ্রিল ভোরে আগুনের সূত্রপাত। রোজার মধ্যে লাগা ভয়াবহ সেই আগুন নেভে ৭৫ ঘণ্টা পর। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়েছে এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে হেলিকপ্টারে করে পানি আনতে হয়েছে।
এ বছর যাদের হারালাম : এ বছর চিরবিদায় জানাতে হয়েছে বেশ কয়েকজন কীর্তিমান আলোকিত মানুষকে; যারা একসময় তাদের প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে আলোকিত করেছেন রাজনীতির মাঠ কিংবা শিল্পাঙ্গন। এ বছর আমরা হারিয়েছি কুরআনের পাখিখ্যাত আন্তর্জাতিক মুফাসসিরে কুরআন, জননন্দিত জননেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেছেন এ বছরের ১২ এপ্রিল।
খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও মারা গেছেন এ বছরের শেষের দিকে, ৯ ডিসেম্বর। তিনি ২০০৭ সালে গঠিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিবিদ সৈয়দ আবুল হোসেনও চলে গেছেন ২০২৩। সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৫১ সালে মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও মারা গেছেন গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ।
কাঁধে ঝোলা, পান খাওয়া লাল ঠোঁট। স্মিত হাসিমাখা মুখে জর্দার ম-ম ঘ্রাণ। ঢিলেঢালা রঙিন শার্ট বা পাঞ্জাবি ছাড়া খুব একটা দেখা যায়নি মাটি ও মানুষের কবি, প্রেম ও প্রতিবাদের কবি আসাদ চৌধুরীকে। কথা বলতেন শুদ্ধ বাংলায়। সহজ-সরল মেদহীন অকৃত্রিম ভাব ও ভাষা ছিল কণ্ঠে। সৌন্দর্যের টানে ছুটেছেন দেশ-দেশান্তর। শব্দের রহস্য আর জীবনের বিচিত্র রসিকতাকে লালন করে চলছিলেন ‘তবক দেওয়া পান’-এর কবি আসাদ চৌধুরী। ৮০ বছর বয়সে ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান এ কবি পরপারে পাড়ি জমান এ বছরের ৫ অক্টোবর।
মূল নাম আকবর হোসেন পাঠান। তবে ফারুক নামে অধিক পরিচিত ছিলেন এ চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে কাঁদিয়ে এ বছরের ১৫ মে ৭৪ বছর বয়সে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট বিশিষ্টি কবি মোহাম্মদ রফিক মারা যান। বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার পথেই ৮০ বছর বয়সে চলে যান বাংলাদেশের প্রথিতযশা এ কবি।
আগামীকাল সূর্য ওঠবে নতুন বছরের বাতা নিয়ে। ২০২৪ সালকে স্বাগত জানাতে বিশ্বজুড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নববর্ষ উদযাপনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, রাশিয়াসহ ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপনা ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিদায় নিচ্ছে ২০২৩ সাল। খ্রিস্টীয় নতুন বছর-২০২৪-কে বরণ করে নিতে উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় সারাবিশ্ব। দেশে দেশে চলছে নতুন বছর বরণে শেষ মুহূর্তের প্রস্ততি। বিশ্বের সকল প্রান্তে এখন তাই সাজসাজ রব। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে নতুন বছরকে সবার আগে স্বাগত জানাবে প্রশান্ত মহাসাগরের টোঙ্গা, সামোয়া ও কিরিবাতি দ্বীপের বাসিন্দারা। এরপর নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানবাসী বরণ করবে নতুন বছরকে। যুক্তরাষ্ট্রে নববর্ষকে ঘিরে প্রতি বছরই থাকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। দেশটির বর্ষবরণ উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার সাজানো হয়েছে রঙ বেরঙের আলোকসজ্জায়। ঐতিহ্যবাহী ক্রিস্টাল বলে ক্ষণ গণনা করতে উন্মুখ হাজারো মানুষ। নিউইয়র্ক ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন শহরেও থাকছে চোখ ধাঁধানো আয়োজন। বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে যুক্তরাজ্যেও। নতুন বছর উদযাপনে ট্রাফালগার স্কয়ারে রয়েছে আয়োজন। থার্টি ফার্স্টের রাতে টেমস নদীর ওপরে আতশবাজি তো থাকছেই।
এছাড়াও ইতালি, কানাডা, স্পেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, রাশিয়াসহ ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চলছে নানা প্রস্তুতি। বর্ণিল আলোকসজ্জা আর আতশবাজির উৎসবে স্বাগত জানাতে আয়োজনে কমতি রাখছে না কেউই। বর্ষবরণ উপলক্ষে দেশে দেশে কনসার্টের আয়োজনও করা হয়েছে।
পুরাতনকে হাসিমুখেই বিদায় দিতে প্রস্তুত দেশ। প্রস্তুত শেষ রজনী উদযাপনে। স্বাগত জানাব নতুন সূর্যকে। বাংলার সর্বস্তরের মানুষের জন্য শুভময় সফলতম বছর আসুক—এ প্রার্থনা করবে সব ধর্মের মানুষ। সবশেষেও বলতে হয়, ‘মুকুলিত সব আশা/স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা/জীবনে চির স্মৃতি হয়ে রয়, পুরাতন বর্ষ বিদায় লয়।/নববর্ষের আগমন হয়।’ সব আশা-স্নেহ-ভালোবাসা স্মৃতি হয়ে থাকুক। আগামী আসুক পুষ্পশোভিত হয়ে। প্রজ্বলিত সূর্যের আলোকচ্ছটায় আলোকিত হোক বিশ্ব। বিশ্বের যাবতীয় মানুষের কল্যাণ হোক। গণতন্ত্র মুক্তি পাক। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সফলতার দিকে এগিয়ে যাক। বিদায় ২০২৩, স্বাগত ২০২৪।