গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া পদত্যাগ করেছেন। তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেছেন। এর তিন দিন পর বুধবার নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। ড. রেজা কিবরিয়া ৩১ তারিখে পদত্যাগ করলেও তা তিন দিন পর কেন প্রকাশ করলেন, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।
কিবরিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক কর্নেল অব. মশিউজ্জামান (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক)-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ড. রেজা কিবরিয়া তার গুলশান ২-এর বাসায় একটি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে নানা আলাপচারিতার পর তিনি তার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় তিনি দলের সকল পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান। তখন উপস্থিত নেতারা তাকে বার বার এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। কোনো কিছু হয়েছে কিনা তারা জিজ্ঞাসা করেন। এসব প্রশ্নের জবাবে কিবরিয়া জানান, দলের ভেতরে কোনো কিছু হয়নি। কোনো দ্বন্দ্ব বা অভিমান নেই আমার। দেশের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আপনারা দলকে আগলে রাখবেন। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। সূত্রটি জানায়, এসময় কিবরিয়া বার বার দোয়া কামনা করেন।
নেতারা জানার চেষ্টা করলেও তিনি পদত্যাগ বিষয়ে প্রশ্ন না করতে অনুরোধ করেন। ফলে তার অবস্থান ধোঁয়াশাই বলে মনে করছেন অনেকেই। ড. রেজা কিবরিয়ার বাসায় বৈঠক শেষ করে তিনিসহ আগত নেতাকর্মীরা মিলে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যান বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গণঅধিকার পরিষদের বিদায়ী আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। সভায় ইতিপূর্বে দলের জন্য তার সকল অবদানকে স্মরণ করে তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। সেইসাথে প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের ইতিহাসে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে বলে নেতারা মত দেন। গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল রাখার লক্ষ্যে সভায় উপস্থিত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান অব.-কে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। পদত্যাগ করলেও ড রেজা কিবরিয়া প্রতি শুভেচ্ছা কামনা করে নিজ নিজ ওয়ালে পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে।
ড. রেজা কিবরিয়া পদত্যাগের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে পদত্যাগ করেছেন। সামনে জাতির জন্য ভালো কিছু আসছে। ড. রেজা কিবরিয়া রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশ ও জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। একজন ধর্মপ্রাণ হিসেবে তার ধর্মীয় চেতনার শত্রুর সাথে হাত মেলাননি। একজন মানুষ হিসেবে মিথ্যাবাদী প্রতারকও নন। বিগত আট মাসে একটিবারের জন্য দলের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেননি। তার এই স্বেচ্ছাপদত্যাগ প্রমাণ করে যে ড. রেজা কিবরিয়া পদ আঁকড়ে ধরে রাখার মতো লোভী ব্যক্তি নন। তার এই পদত্যাগ আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। গণঅধিকার পরিষদ তার এই পদত্যাগকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করে তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কারোই বিচলিত হবার কোনো কারণ নেই, কারণ এটি বাংলাদেশের জনগণের দল, কোনো ব্যক্তির নয়। এই দল আরো বেশি শ্রম ও মেধা দিয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে দাঁড়িয়ে থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেন। হবিগঞ্জ ১ আসন থেকে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। ড. রেজা কিবরিয়ার ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুর দ্বন্দ্বের কারণে গণঅধিকার পরিষদ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।