দুই পা নেই মায়ের কোলে চড়ে কলেজে আসেন সোনিয়া এমন কিছু শিরোনামে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। এমন একটি সংবাদ পড়েন লেটস ওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট বোরহান সাফি। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জনতার ঈশ্বরগঞ্জ গ্রুপের মাধ্যমে সোনিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে বগুড়ার ঠেঙ্গামারা টিএমএসএস এন্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে লিম্ব প্রকল্পের সমন্বয়ে সোনিয়াকে দুটি উন্নত প্রযুক্তির কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। এছাড়া সংবাদটি প্রকাশের পর সরকারিভাবেও সোনিয়ার দুটি কৃত্রিম পা সংযোজনের আশ্বাস দিয়েছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। তবে সনিয়া ও তার পরিবার বেসরকারিভাবেই পা সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে টিএমএসএস এন্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টি,এম এস এস এর উপ নিবাহী পরিচালক-(২) রোটারিয়ান ডা. মতিউর রহমানের নির্দেশনায় সোনিয়ার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুটি কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। জানা যায়, আট বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জটিল রোগে আক্রান্ত হওযার পর সোনিয়ার দুটি পা কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকে খুব কষ্টে চলাচল করতে হয় সোনিয়াকে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অদম্য সোনিয়া মায়ের কোলে চড়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। সোনিয়ার বাড়ি উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজান-চরনওপাড়া গ্রামে। কৃষক বাবা রইছ উদ্দিনের অভাব-অনটনের ঘরে জন্ম তার। সনিয়ার স্বপ্ন দুটি কৃত্রিম পা পেলে সে লেখাপড়া করে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সোনিয়ার বাবা রইছ উদ্দিন বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমার মেয়ের দুটি কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। সোনিয়ার মা শিউলি বেগম বলেন, আমরা হাসপাতালে ১১দিন ছিলাম। হাসপাতালের লোকজন খুব আন্তরিকতার সাথে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়েছে। সোনিয়া আক্তার(১৮) বলেন, কৃত্রিম দুটি পা দিয়ে পুরোপুরি হাঁটার অভ্যাস করতে ৩ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে বলেছে ডাক্তার। তারা কিছু নিয়মকানুন দিয়েছেন, সেগুলো মেনে চললে আমি নিজে নিজেই হেঁটে কলেজে যেতে পারবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেনো আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। এ প্রসঙ্গে টি,এমএসএস (বাংলাদেশ) এর উপ নিবাহী পরিচালক-(২) রোটারিয়ান ডা. মতিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা সোনিয়ার বিষয়টি জানতে পারি। তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে দুটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছি। তবে পা সংযোজনের পর স্বাধীনভাবে হাঁটার জন্য তার ৬ মাস প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু এটা খুব ব্যয়বহুল হওয়ায় আমরা সোনিয়াকে বাসায় প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। বর্তমানে সে ওয়ার্কিং ফ্রেমের সাহায্যে হাঁটাচলা করতে পারছে। ৬ মাসের ভিতরে পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং সম্পূর্ণ করে সে নিজে নিজে হাঁটতে সক্ষম হবে।