সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

অঙ্কিতা ট্রেডার্সের গাড়ি ও মাল বাঁচাতে প্রাণ হারানো যুবকের পরিবারের পাশে নেই মালিক

হুমায়ুন কবির (কালীগঞ্জ) ঝিনাইদহ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪

অঙ্কিতা ট্রেডার্স এর অবৈধ ইঞ্জিন চালিত লাটা গাড়ি ও মালামাল বাঁচাতে যেয়ে প্রাণ হারায় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ও কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মাতা সন্তান হারিয়ে পাগলের ন্যায় প্রলাপ বকছে সারাক্ষণ। ৬ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনের অদূরে বাবরা রেল গেট নামক স্থানে এমন হৃদয়বিদারক এক ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও কালিগঞ্জ কলেজ পাড়ায় বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করা অঙ্কিতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী খামারমুন্দিয়া গ্রামের কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে বিপুল কুমার সন্তান হারা অসহায় হতদরিদ্র এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি, নেয়নি খোজ খবর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্ঘটনার দিন খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস নামক ট্রেনটি বারোবাজার থেকে ছেড়ে আসে সকাল ১০ টা বেজে ৫৫ মিনিটে। ওই ট্রেনটি মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনের প্রবেশ করে ১১ টা ২৬ মিনিটে। নিহত মেহেদীর মুঠোফোনে ৬ মার্চ ২০২৩ এ ইনকামিং কলের তালিকা খুঁজে দেখা যায়, পরিবেশক বিপুল কুমারের ০১৮৪৫৯৪৪২২৫ এই নাম্বার থেকে নিহত মেহেদী হাসানের মোবাইল ফোনে কল করে সকাল ১১ টা ১৭ মিনিটে ২৭ সেকেন্ড ১১ টা ২৭ মিনিটে ৪৭ সেকেন্ড কথা বলেন। চিত্রা এক্সপ্রেস নামক ট্রেনটি বারোবাজার থেকে ছেড়ে এসে মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনে ঢোকার মধ্যকার সময়ে মেহেদীর কাজ করা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বিপুল কুমারের ফোনালাপ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।দুর্ঘটনার দিন বাবরা রেল গেটে দায়িত্বরত গেটকিপার রুবেল হোসেন জানান, মেহেদির গাড়িটি রেললাইনের উপর আটকে গেলে আমরা কয়েক দফা চেষ্টা করেও গাড়িটি লাইন থেকে সরাতে পারিনি। ইতিমধ্যে বারোবাজার থেকে ট্রেন ছেড়ে আসার সংবাদ পেয়ে মেহেদী কে লাইনের উপর থেকে ধরে এনে ঘরে বসিয়ে রেখে আমার এগিয়ে যায় লাল পতকা নিয়ে ট্রেন থামাতে। এসময় আমি তাকে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বুঝিয়ে বলি। পরবর্তীতে ট্রেন থামাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে দেখি মেহেদী কাটা পড়েছে ট্রেনে।জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও কেন সে ট্রেন লাইন থেকে লাটা গাড়িটি সরানোর জন্য গেল এটা আমার বুঝে আসে না। নিহত মেহেদির পিতা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। সে নিজের জীবনের কথা না ভেবে ও ডিলারের মালসহ লাটা গাড়ি সরাতে যেয়েয় দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা গেছে । অথচ তার মাহাজন বিপুল বাবু সেভাবে কোনো খোঁজ খবর নেননি। তার পাওনা বেতন কড়িও পরিশোধ করেননি। উনার আচরণও প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়েছে। অঙ্কিতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বিপুল কুমারের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মেহেদীর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমিও মর্মাহত। সে আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না। ঐদিন আমি তার জানাজায় গেছিলাম। এরপর সেভাবে তার খোঁজখবর রাখতে পারোনি সত্য। তবে ২ দিন আগে যেয়ে আমি তার বাপ মার সঙ্গে কথা বলে এসেছি। এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে নানারকম কথা ছড়াচ্ছে। যে কারণে অনেকটা ভয়েই আমি খোঁজ-খবর সেভাবে রাখতে পারিনি। আর দুর্ঘটনার দিন আমি মেহেদীর ফোনে কল দিলে অন্যলোক ফোনটি রিসিভ করেছিল। সাত মাস আগে মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতনে অঙ্কিতা ট্রেডার্সে কাজ নেয় দরিদ্র পরিবারের কলেজ পড়ুয়া উদ্যমী টগবগে তরুণ মেহেদী হাসান। পিতা মাহাবুবুর রহমান চাতালের মিস্ত্রী হিসেবে যা আয় করেন তা দিয়ে ৫ জনের সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় ছেলেকে কাজে যেতে হয়। স্বপ্নবাজ মেহেদী সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও রাতের বেলা কম্পিউটারে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল।তার অকাল মৃত্যুতে বাবা-মা একদিকে হারিয়েছে তাদের নাড়ি ছেড়া ধন, পরিবারের একমাত্র ভরসা আদরের মেহেদীকে। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া বোন মেহতাজ হারিয়েছে বড় ভাইয়ের ভালোবাসা ও আদর। অসহায় এই পরিবারটির একমাত্র প্রদীপ মেহেদী হাসানকে হারিয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলেও অঙ্কিতা ট্রেডার্সের মালিক বিপুল কুমারের ভূমিকা নিয়ে পরিচিতি জন আত্মীয়-স্বজন তাই প্রশ্ন তুলেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com