ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ভারইমারী গ্রামে সজীব হোসেনের লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে। সেখানে কর্মচারী জীবন হোসেন পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁর ভাষ্য, খামারে চার হাজার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। সাত দিনে মরেছে অর্ধশতাধিক। আরেক খামারের শ্রমিক জীবন রহমান, সৌরভ ও শাকিল বলছেন, গরমে মুরগির ছটফটানি শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসেও ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। প্রতিদিন পানি ছিটালেও মুরগি মারা যাচ্ছে।
১৩ দিন ধরে ঈশ্বরদীতে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে মুরগি মারা যাওয়ায় সজীবের মতো খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। মুরগিকে গরম থেকে রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে বলে জানান খামারি সজীব হোসেন। খাবারও কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিম উৎপাদন কমছে।
জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঈশ্বরদীতে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এরপর ৩৯ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। এর মধ্যে গত ২১ এপ্রিল ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। তবে গত শুক্রবার ৪২ দশমিক শূন্য ৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ বছর উপজেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে পোলট্রি খামারি ও ব্যবসায়ীরা মুরগি বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শত শত মুরগি। গরমের প্রভাবে কমছে ডিম উৎপাদন।
খামারিরা বলছেন, তাপপ্রবাহের কারণে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে ও টিনে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। দাশুড়িয়া, ভাড়ইমারী, সুলতানপুর, চাঁদপুর ও নওদাপাড়া গ্রামে বেশ কিছু মুরগির খামার রয়েছে। শুক্রবার এসব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মুরগি দেখাশোনায় ব্যস্ত কর্মচারীরা। কেউ পানি স্প্রে করছেন, কেউবা ডিম সংগ্রহ করছেন। খামার ঠান্ডা রাখতে চলছে বৈদ্যুতিক পাখা। ভেজা চট বিছানো হয়েছে। এরপরও গরমে হাঁসফাঁস করছে মুরগি।
দুটি খামার রয়েছে সজীব হোসেনের। একটি ভারইমারী ও অন্যটি খাঁরজানী গ্রামে। খাঁরজানীতে চার হাজার লেয়ার মুরগি আছে। প্রতিদিন আট বস্তা খাবার লাগে। প্রতি বস্তার দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা। খামারে রয়েছে ২৪টি ফ্যান। আছে নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা। এক সপ্তাহ আগে ডিম উৎপাদন হতো অন্তত ২ হাজার ২৫০টি। বর্তমানে এ খামারে প্রতিদিন ১ হাজার ৬৫০টি ডিম উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বারবার টিনের চাল ও চট ভেজানো হয় বলে তিনি জানান।
খামার নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাড়মি সুলতানপুরের মমিনুল ও মামুন। তারা বলেন, গরম দীর্ঘায়িত হলে মুরগি বাঁচানো কঠিন হবে। দাশুড়িয়ার বাগবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে সফর বিশ্বাসের শাহনাজ পোলট্রি খামারে সাড়ে তিন হাজার মুরগি রয়েছে। এগুলো দিনে ২ হাজার ২৫০টি ডিম দেয়। এখন দেড় হাজার উৎপাদন হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ঈশ্বরদী শাখার সভাপতি মো. জাহাবুল হক বলেন, উপজেলার ২৮টি গ্রামে ১১৫টি খামারে দিনে দু’লাখের ওপর ডিম উৎপাদন হয়। প্রতিটির উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকায়। একদিকে খরচ বেশি, অন্যদিকে গরমে উৎপাদন ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ফলে খামারিদের লোকসান হচ্ছে।
খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ডিমের দাম কমলেও মুরগির দাম একই আছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ ও লেয়ার এখন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এ দামে বিক্রি হয়েছে। প্রচ- গরমে দুপুরে মুরগিকে খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। কর্মকর্তারা বলছেন, গরমে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যায়। এমন আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে খামারিদের অবশ্যই খামারে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চটের ভেজা বস্তা, খড় ও গাছের পাতা দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হোসাইন বলেন, গরম থেকে খামার রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ লিফলেট বিতরণসহ খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছে। মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন জাতীয় খাবার বেশি খেতে দিতেও বলছেন তারা।
শুক্রবার এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে জানিয়ে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী তাপমাত্রা পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, ঈশ্বরদী এলাকায় ‘প্রচ- তাপপ্রবাহ’ বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।